Home Second Lead আগে থেকেই লেখা ছিল করোনাভাইরাসের কথা!

আগে থেকেই লেখা ছিল করোনাভাইরাসের কথা!

এ পৃথিবীতে ঘটা বহু কিছুরই ব্যাখ্যা নাকি দিতে পারে না বিজ্ঞান। সে সমস্ত ঘটনা কিছু মানুষের কাছে অলৌকিক বলে গৃহীত হয়, কেউ আবার সমাপতন বলে মেনে নেন। কিন্তু এই দুইয়ের মিশেলে একটি জিনিস আজও বহু মানুষকে বিস্মিত ও স্তম্ভিত করে তোলে। তা হল, ভবিষ্যদ্বাণী। পৃথিবীতে এমন বহু ঘটনার উদাহরণ আছে, যা সম্পর্কে অনেক দিন আগেই কেউ বলে দিয়েছিলেন সবিস্তারে। পরবর্তী কালে সে ঘটনা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাওয়ার পরে, ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি যুক্তি বা বিজ্ঞানের পথে।

সাম্প্রতিক বিশ্বের ভয়াবহ ত্রাস করোনাভাইরাস নিয়েও এখন এমনই একটি বিস্ময়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন নেটিজেনরা। কারণ হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া গেছে, এক বার নয়, অন্তত দু’-দু’বার করোনাভাইরাস সম্পর্কে আগেই লিখে রেখেছেন দুই লেখক। প্রথমটা আজ থেকে ৩৯ বছর আগে ১৯৮১ সালে, দ্বিতীয়টা ১২ বছর আগে ২০০৮ সালে।

গত বছর ডিসেম্বর মাসে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে শুরু হয় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ। করোনাভাইরাসের এই নতুন প্রজাতিটির কারণে প্রাণঘাতী নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হন একের পর এক মানুষ। মাস দুয়েকের মধ্যেই চিনে প্রায় হাজার তিনেক মানুষকে মেরে ফেলে এই অসুখ। চিনের বাইরেও ক্রমে ছড়াতে শুরু করে ভাইরাস। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে সংক্রমিত এই ঘাতক ভাইরাসে। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা পেরিয়েছে চার হাজার।

এমনই সময়ে চার দশক আগে লেখা একটি উপন্যাস ‘‌দ্য আইজ অফ ডার্কনেস’‌-এর একটি পাতা দেখে শিউরে উঠলেন নেটিজেনরা। তাতে এই করোনাভাইরাসের মতোই একটি ভাইরাসের কথা লেখা রয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই ভাইরাসের উৎপত্তিকেন্দ্র ছিল চিনের উহান শহর! বইয়ে ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছিল উহান-৪০০। কারণ সেখানে উহান শহরের ঠিক অদূরে আরডিএনএ গবেষণাগারে এটি তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি ছিল মানুষের তৈরি অণুজীবের ৪০০তম কার্যক্রম।

১৯৮১ সালে ডিন কুনৎজের লেখা এই রহস্য উপন্যাসে বলা আছে, এই ভাইরাসটিকে তৈরি করেছে মানুষ। জৈবিক অস্ত্র হিসেবে ল্যাবরেটরিতে বানানো হয়েছিল। এই বইয়ের কথা সামনে আসার পরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি সত্যিই ৪০ বছর আগে চিনাদেরই বানানো জৈবিক অস্ত্র এই করোনাভাইরাস?‌

এই প্রশ্নকে আরও ধারালো করেছে সম্প্রতি সামনে আসা ইজরায়েলি সেনা-গোয়েন্দা এবং মাইক্রোবায়োলজিস্টদের মতামত। তাঁদের দাবি, এই ভাইরাসের জন্মদাতা উহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল ৪ (BSL-4) ল্যাবোরেটরি। মনে করা হচ্ছে, অসাবধানতাবশত এই গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ। ঠিক যেভাবে একটা সময় সার্স এবং ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে উঠলে আঙুল উঠেছিল এই ল্যাবোরেটরির দিকেই। ‌

ওই থ্রিলার উপন্যাসটিও যেন হুবহু এমনই বলছে। উপন্যাসে লেখা আছে, ‘বায়োলজিক্যাল উইপন প্রোগ্রামের’ আওতায় চিনের সামরিক গবেষণাগারে বায়োলজিক্যাল যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে উহান-৪০০ ভাইরাস৷ বায়োলজিক্যাল যুদ্ধে শত্রুপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই মূলত এসব ভাইরাস তৈরি করা হয়।  প্রাণঘাতী কোনও ভাইরাসের মাধ্যমে জৈবিক বিষাক্ত পদার্থ কিংবা ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস-ছত্রাকের মতো সংক্রামক অণুজীবের মাধ্যমে এসব অস্ত্র তৈরি করা হয় অস্ত্র ছাড়াই মানুষ হত্যার উদ্দেশ্যে।

 

তবে এখানে একটা খটকা রয়েছে। একটি সূত্র দাবি করছে, ১৮৯১ সালে যখন এই বইটি প্রকাশিত হয়, তখন এই ভাইরাসের নাম লেখা ছিল গোর্কি ৪০০। পরে অন্য কোনও সংস্করণে নামটি বদলে উহান করা হয়। ঠিক কোন সংস্করণে কেন নাম বদলানো হল, তারও কোনও যুক্তি বা প্রমাণ মেলেনি।

বায়োলজিক্যাল যুদ্ধ হল, মারণ ভাইরাস প্রয়োগ করে একটি দেশকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া কোনও রকম আগ্নেয়াস্ত্র বা পরমাণু বোমা ছাড়াই৷ বায়োলজিক্যাল অস্ত্র তৈরির ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বেশ পুরনো৷ অ্যানথ্রাক্স, ব্রুসেলোসিস, কলেরা, নিউমনিক প্লেগ, টুলারেমিয়া, স্মলক্স, গ্ল্যান্ডার্সের মতো মারণ ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া একাধিক বার ব্যবহৃত হয়েছে বড় বড় সব যুদ্ধে৷

 

টুইটারে এক ব্যক্তি প্রথমে এই উপন্যাসের একটি অংশ পোস্ট করেন৷ উপন্যাসের নামও জানান।  সঙ্গে লেখেন, ‘অদ্ভুত এক পৃথিবীতে বাস করছি আমরা।’ এর পরেই সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়৷ উপন্যাসের ওই অংশটি দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত সোশ্যাল মিডিয়া৷

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মনের কল্পনা দিয়ে লেখা থ্রিলার উপন্যাসে এমন জৈব-মারণাস্ত্রের কথা কাকতালীয় হলেও হতে পারে। কিন্তু ১২ বছর আগে লেখা আরও একটি বইয়ে কোনও কল্পনা নয়, একেবারে সরাসরি বার্তা দেওয়া হয়েছে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার। এবং সেটাও ঠিক করোনাভাইরাসের মতোই একটা মহামারীর কারণে।

এই বইটির নাম ‘এন্ড অব ডেজ’ অর্থাৎ, শেষের দিন কিংবা দিন ফুরিয়ে আসছে। সিলভিয়া ব্রাউন নামের এক আমেরিকান লেখিকার লেখা এই বইটিতে কী কী ভাবে পৃথিবীর বা সভ্যতার পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে সেই সম্পর্কে একাধিক আগাম আভাস দেওয়া হয়েছে। তাতেই একেবারে স্পষ্ট ভাষায় এই বিশ্বজোড়া মহামারীর কথা বলা হয়েছিল। সিলভিয়া ব্রাউন নিজেকে অতিপ্রাকৃতিক চেতনার মালিক বলে দাবি করেছিলেন একাধিক বার। ২০১৩ সালে মারা যান তিনি।

এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৮ সালে। বইটির প্রচ্ছদের এবং যে পৃষ্ঠায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, সেই পৃষ্ঠার অংশের একটি ছবিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। সেখানেও যা লেখা আছে, তা পড়লে চমকে উঠতে হয়। বইটিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে নিউমোনিয়া জাতীয় একটি মারাত্মক রোগ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং সমস্ত পরিচিত চিকিৎসা পদ্ধতিকে প্রতিরোধ করে ফুসফুস এবং ফুসফুসের নালিগুলিতে আক্রমণ করবে’।

নভেল করোনভাইরাস সংক্রমণের কারণে যে কোভিড-১৯ নামের রোগটি হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে এখন, সে রোগের সঙ্গে এই বইতে বর্ণিত রোগটির যে দারুণ মিল, তা বলাই বাহুল্য। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে অসুস্থতার প্রকৃতও একই রকম। গত বছরের শেষ থেকেই এই সংক্রমণ শুরু হলেও এই বছর অর্থাৎ ২০২০ সালেই এটি গোটা পৃথিবীকে বিপন্ন করে তুলেছে। পরিচিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাজ না হওয়ার বিষয়েও অস্বাভাবিক সাদৃশ্য রয়েছে বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর।

স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে এতদূর অবধি করোনভাইরাসের আশ্চর্য মিল দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছেন সকলে। তবে নেটিজেনরা এর মধ্যেও আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন। কারণ বইটির ভবিষ্যদ্বাণী যদি সত্যি বলে বিশ্বাস করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, তাতে বলা হয়েছে, এই রোগ মারাত্মক ক্ষতি করলেও, তা বেশিদিন থাকবে না। আক্রমণের কয়েক দিনের মধ্যেই তা অদৃশ্য হয়ে যাবে। তবে, দশ বছর পর এই রোগ আরও একবার  ফিরে আসবে। তার পরে একেবারে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

এই কথা জেনে সকলেই চাইছেন, এখনও পর্যন্ত যেমন বইয়ের সঙ্গে করোনাভাইরাস মহামারীর চেহারা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে, বাকিটাও যেন একই রকম হয়। করোনাভাইরাস যেন তাড়াতাড়ি পরাস্ত হয় এবার। ১০ বছরে পরের ব্যাপারর নাহয় পরে সামাল দেওয়া যাবে।

-সৌজন্যে দি ওয়াল