বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের কোন বাণিজ্যিক সংযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
শনিবার (১৩ মার্চ) ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘রাজধানীতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী একথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্মাণ কাজে লাইন কাটা যাচ্ছে বলে ডেসকো জানিয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের যথাযথ নকশা থাকা উচিত। রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না। যেখানে বাণিজ্যিক সেখানে বাণিজ্যিক সংযোগ পাবে এর বাইরে নয়। আগে যেগুলো অবৈধভাবে সংযোগ নিয়েছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা হবে। এই কাজ শুরুও হয়েছে, তবে অনেকে মামলা দিয়ে আটকে দিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রাহক সেবাকে কতো উন্নত করা যায়, কতো সাশ্রয়ী খরচে দেওয়া যায় সে বিষয়ে কাজ চলছে। বিগত সরকারের অপরিকল্পিত কাজ করেছে, ভুক্তভোগী আমরা। অপরিকল্পিত ওয়েতে উন্নয়ন হলে বিদ্যুৎ দেওয়া খুবেই কঠিন। বারিধারা এলাকায় জোর করে হোটেল করেছে। ঢাকা শহরে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দোকান নেই। রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় হোটেল করে লাইন চাচ্ছেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্লান করা হলেও কাজ হবে না। সবার আগে আমাদেরকে আইন মানতে হবে।
তিনি বলেন, ৩ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহক। মাত্র ২০ লাখ প্রি-পেইড মিটার বসেছে। অনেকে মিটারের দাম বেশি বলে নিতে চাচ্ছে না। মিটার রিডিং নিতে বিপুল পরিমাণ লোকের প্রয়োজন হয়। যে যাই বলুক, স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার বসানো হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্পে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বিল বকেয়া। লাইন কাটতে গেলে বলেন কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হবে। বিল দিতে পারেন না, কি প্লান করলেন। বিদ্যুৎ বিল না দিয়ে সেই শিল্প চালাবো কেমনে। বিল না পেলে সংস্থাগুলো চলবে কি করে।
দোকান মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মার্কেট ৮টার পরও খোলা। আপনাদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে হবে। আপনাদেরকে সজাগ হতে হবে। রাজউকের অনুমোদন ছাড়া দোকান করবেন না।
এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সভাপতিত্বে ইডি শামীম জাহাঙ্গীর সঞ্চালনায় সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারের লক্ষ্য মানুষের সেবা প্রদান করা। মানুষের পকেট কেটে টাকা আদায় করা না। আমাদের কাজ হচ্ছে সেবা নিশ্চিত করা। হয়রানিমূলক কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি’র (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। লাইন চালু রেখে কিভাবে সংস্কার কাজ করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছি। প্রত্যেকটি ৩৩ কেভি সাবস্টেশনকে ডুয়েল সোর্স করা হচ্ছে। আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং নেটওয়ার্ক কাজ শুরু হয়েছে। স্মার্ট গ্রিড করার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জায়গার অপ্রতুলতা, গ্রাহকদের নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা। বলতে দ্বিধা নেই এখানও মেগা প্রকল্প পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। নতুনকে আলিঙ্গন করে, সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওছার আমীর আলী বলেন, আমরা আশা করছি চলমান প্রকল্প এ বছরেই শেষ হবে। তাহলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পুরোপুরি করতে পারবো। চাহিদাজনিত সংকট আর থাকবে না।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা ইনসুলেটরের ওপর বালির আস্তরন পড়ে যায়। যে কারণে বৃষ্টি হলে অনেক সময় সমস্যা হয়। ক্যাবল ফল্ট হয়েছে ২০৬টি, এর ৯০ শতাংশ হয়েছে ওয়াসার কাজের কারণে। উঁচু ভবন থেকে বিভিন্ন সামগ্রী নিচে ফেলা হয়, এতে আমাদের সমস্যা হয়, লাইন ছিঁড়ে যায়। গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং করা হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়ার জন্য। ১৩২/৩৩ কেভি পুরোটাই আন্ডারগ্রাউন্ডে যাচ্ছে। ওভারহেড লাইন থাকছে না। ডুয়েল সোর্স করা হচ্ছে। সংক্রিয়ভাবে বিকল্প সোর্স কিভাবে চালু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।
বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, এখন অনেক অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ বন্ধ করতে পারলে সিস্টেম লস কমে আসবে।
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, সিস্টেম লস এখন ভোক্তার কাঁধে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট্ট একটি বাসায় মাদার মিটার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একমাসে ৪-৫ শ টাকা, এই মাসে ১৪-১৫ হাজার টাকা। একজন গ্রাহক কি করে বুঝবে সত্যিই এই বিল যথাযথ কি না। বিদ্যুৎ খাতের মিরাক্কেল উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে তেমন স্বস্তি আসেনি। না হলে সব অর্জন ব্যর্থ হবে।
অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান বলেন, পুর্বাঞ্চলে আন্ডারগ্রাউন্ড করাটা সহজ। কিন্তু পুরান ঢাকায় এই কাজটি করা খুবই জটিল। তাই নতুন যে সব এলাকায় আবাসন হচ্ছে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া।