বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ঠিক যেন আমাদেরই পৃথিবী। কিন্তু আরও বড়। আরও উত্তপ্তন ঠিক পৃথিবীর আদিম অবস্থার মতো গনগনে তার তেজ। যেন জলের মতো ফুটছে। আকারে-ভরেও পেল্লায়। আমাদের সূর্যের মতোই এক নক্ষত্রকে ঘিরে পাক খেয়ে চলেছে। সে গ্রহের সূর্যও আমাদের সূর্যের চেয়ে বড়।
এক্সোপ্ল্যানেট বা ভিনগ্রহের সন্ধানে মহাকাশে চোখ রেখে বসে আছে নাসার ‘এক্সোপ্ল্যানেট-হান্টার’ টেস (TESS) । এই ‘ট্রানসিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ মিশনেই ধরা পড়েছে পৃথিবীর মতোই এক ভিনগ্রহ। আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির কনফারেন্সে এখন এই নতুন ভিনগ্রহ নিয়েই চর্চা। এই গ্রহের উত্তাপ দেখে মনে হয়েছে এখানে প্রাণের সম্ভাবনা নেই, তবে এই গ্রহের ঘনত্ব অনেকটা পৃথিবীরই মতো।
২০১৮ সালে নাসার এক্সোপ্ল্যানেট-হান্টার এই ভিনগ্রহের খবর দিয়েছিল। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালে এই গ্রহের খোঁজের কথা বলা হয়েছে। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির থেকেও পুরনো এই গ্রহ। বয়স প্রায় হাজার কোটি বছর। পৃথিবীর থেকে আকারে ৫০ গুণ বড়। তাই একে ‘সুপার আর্থ’ বলা হচ্ছে। নাম ‘টিওআই-৫৬১বি’।
এই গ্রহ তার সূর্যের চারদিকে ১২ ঘণ্টায় সম্পূর্ণ পাক খেয়ে আসছে, অর্থাৎ পৃথিবীর সময়ের অর্ধেক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গ্রহে এখনও পৃথিবীর মতো প্রাণ তৈরির পরিবেশ নেই। প্রচণ্ড উত্তপ্ত। গ্রহের পৃষ্ঠদেশের তাপমাত্রা প্রায় ১৭২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এত উত্তপ্ত পরিবেশে প্রাণ তৈরি হতে পারে না।
এক্সোপ্ল্যানেটের খোঁজে গত ২০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। হাজারখানেক এমন গ্রহের সন্ধানও মিলেছিল। তবে ২০০৯-এ নাসার কেপলার অভিযান শুরু হলে মাত্র চার বছরেই আরও সাড়ে তিন হাজার ভিনগ্রহের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। তাদের বিচিত্র গল্প, অজানা রহস্য, সব বলে শেষ করা যাবে না। গত বছরই নাসার টেস মিশনে পৃথিবীর মতোই এক গ্রহের খোঁজ মিলেছিল। পৃথিবী থেকে ১৩০০ আলোকবর্ষ দূরে ‘টিওআই ১৩৩৮ সিস্টেম’-এর সেই গ্রহের নাম ‘টিওআই ১৩৩৮বি’। তার দুই নক্ষত্র। বৃত্তাকার কক্ষপথে সেই গ্রহটি ঘুরে চলেছে তাদের চারপাশে। দুই নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করা ভিনগ্রহগুলিকে বলা হয় ‘সারকাম-বাইনারি প্ল্যানেট’। যদিও সেখানে প্রাণ আছে কিনা জানা যায়নি।
আমাদের পৃথিবী থেকে ৮৮০ আলোকবর্ষ দূরে এক নক্ষত্রের পরিবার আছে যার নাম ‘ডব্লিউএএসপি-১২১’। এই ঠিকানায় এমন এক ভিনগ্রহ রয়েছে যেখানে পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল আছে। গ্রহের নাম ‘ডব্লিউএএসপি-১২১-বি’। এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ট্রোপোস্ফিয়ার আছে, তার ওপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার আছে। সেখানে আবার জলীয় বাষ্পও জমে আছে।
এই ব্রহ্মাণ্ডে নানা জাতের, নানা গোত্রের গ্রহ আছে। কেউ পৃথিবীর মতো (আর্থ), কেউ পৃথিবীর চেয়ে ছোট ‘সাব-আর্থ’, আবার কেউ পৃথিবীর চেয়ে বড় ‘সুপার আর্থ’। এই সুপার আর্থগুলিতে জল ও কার্বন থাকার সম্ভাবনা বেশি। সুপার আর্থদের তাপমাত্রাও হয় অনেকটা পৃথিবীর মতোই। অর্থাৎ সেখানে হ্যাবিটেবল জোন বা প্রাণের বাসযোগ্য পরিবেশ রয়েছে। খান পঞ্চাশেক এমন গ্রহের খোঁজ মিলেছে যাদের নিয়ে এখন নাড়াচাড়া করছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর যমজও বেরিয়ে পড়েছে এই ফাঁকে, এক্সোপ্ল্যানেট ‘টিওআই ৭০০ ডি’। নীলপানা গ্রহ ঠিক যেন নতুন পৃথিবী। এখনও পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি গ্রহ, বামন গ্রহ ও উপগ্রহের খোঁজ মিলেছে যাদের সঙ্গে পৃথিবীর বিস্তর মিল। এই গ্রহগুলির মধ্যে কে’পলার-৪৫২বি’-ই আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর মতো, জল থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।-দি ওয়াল