বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
দিনাজপুর: ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে হত্যাচেষ্টায় শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত চারজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা চারজনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগের সদস্য আসাদুল ইসলাম, উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুদ রানা ও নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ জানিয়েছে, আটকদের মধ্যে নৈশপ্রহরী নাহিদ হাসান পলাশ বাদে সবার নামেই আছে একাধিক মামলা। তাদের বিরুদ্ধে মাদক কারবার, মাদক সেবন, জমি দখল, চাঁদাবাজি, ত্রাণ চুরি, মেয়রের ওপর হামলা, সংসদ সদস্যকে হামলার পরিকল্পনাসহ সাধারণ মানুষকে মারার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক দিন আগে বালু মহাল নিয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীয় জনগণসহ বিভিন্ন সূত্র অভিযোগ করে, জাহাঙ্গীর, আসাদুল ও মাসুদ বাহিনীর কাছে জিম্মি ঘোড়াঘাটের অনেকে। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, হামলা-মামলা এসব নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই তিন ব্যক্তির কাছে। তাদের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন।
চলতি বছরের ১৩ মে ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছিলেন। ওই ত্রাণ বিতরণ বানচাল করতে মেয়রকে মারধর করে জাহাঙ্গীর-আসাদুল বাহিনী। ওই সময় মেয়রের মামলায় জাহাঙ্গীর আলমসহ তার বাহিনীর চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজার এলাকায় নুনদহ ঘাটে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন সিংড়া ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি মাসুদ রানা। ইউএনও ওয়াহিদা খানম কিছুদিন আগে তাদের বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম পুড়িয়ে দেন। এতে ইউএনওর ওপর প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যুবলীগ নেতা মাসুদ রানা।
এরপর ১৪ মে ইউএনওর কাছে মুক্তিযোদ্ধা সায়েদ আলীর জামাতা আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানার বিরুদ্ধে জমি দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগ করেন। অভিযোগে আবিদুর রহমান জানিয়েছেন, দীর্ঘ দুই বছর ধরে জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। ‘মৃত্যু ভয়ে’ আবিদুর রহমান দুই লাখ টাকা জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানাকে দেন। পরে বাকি তিন লাখ টাকা দিতে না পারায় উপজেলার কলোনি পাড়া এলাকায় এক একর জমি দখল করে নেয় জাহাঙ্গীর বাহিনী। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। তিনি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তৎপরতা চালান।
এমপি শিবলী সাদিক বলেন,‘আটক জাহাঙ্গীর আলম একাধিক মাদক মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তিন মাস আগে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘করোনার সংকটে নিজ তহবিল থেকে চার উপজেলায় ৬০ হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করি। ঘোড়াঘাট পৌরসভায় রক্ষিত ত্রাণ ছিনতাইয়ের জন্য জাহাঙ্গীর আলম মেয়রকে হুমকি দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় জানতে পারি জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে নান্নু, মাসুদ রানা, ইয়াদ আলী, নাহিদ, আব্দুর রবসহ একটি দল এমপির ওপর হামলার জন্য রাস্তায় পূর্বপ্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।’
দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ বলেন, ‘জাহাঙ্গীর যে কমিটির আহ্বায়ক তা হয়েছিল তিন বছর আগে। সাধারণ নিয়মে তিন বছরের বেশি সময় হলে ওই কমিটির কার্যকারিতা থাকে না। এরপরও তাকে বহিষ্কারের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের আপত্তিসহ কেন্দ্রে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কারণ তাদের বহিষ্কারের ক্ষমতা জেলা কমিটির নেই।
শুক্রবার বিকেলে জেলা যুবলীগের সভাপতি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানাকে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল নিশ্চিত করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাইনি এ বিষয়ে।’
ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আমিরুল ইসলাম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল সেগুলো থেকে তারা জামিনে মুক্ত ছিল। আপাতত তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ‘ইউএনও, এসিল্যান্ড, এডিসি কিংবা ডিসিদের কাছে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসেন। আমরা সেগুলো যতটা দ্রুত সম্ভব সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু একজন ইউএনও, এসিল্যান্ড, এডিসি, ডিসি কতটা নিরাপদ সেটা ভাবার বিষয়। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হয় তাদের’।
তিনি আরো বলেন, ‘এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি বা ডিসিদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়গুলো আরো জোরদার করা দরকার। এসব দায়িত্বে যারা থাকবেন তারা যদি ভ্রমণ করতেও যান তাহলে নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এসব বিষয়ে নজর দিতে জোর দাবি জানাই’।