বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ অনাদায়ে চট্টগ্রামের ইমাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলীসহ পাঁচজনকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মোহাম্মদ আলী শেয়ারবাজারে নথিবদ্ধ ইমাম বাটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গতকাল চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মো. মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন ইমাম গ্রুপের পরিচালক ও মোহাম্মদ আলীর সন্তান আলী ইমাম, মনির আহমেদ, ফেরদৌসী বেগম ও রিজিয়া খাতুন।
অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রেজাউল করিম জানান, ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে বাধ্য করতে আদালত ইমাম গ্রুপের এমডিসহ পাঁচজনকে পাঁচ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাজার পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
২০১৪ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় খেলাপি হওয়া প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ইমাম গ্রুপের মালিকদের বিরুদ্ধে জারি মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে ২০১২ সালে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তারা অর্থ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সালে অর্থ ঋণ মামলার রায় পায় ব্যাংক। এরপর ওই বছরই ১৮৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আদায়ে জারি মামলাটি দায়ের করা হয়। ইমাম গ্রুপের মাস্টার ট্রেডিংয়ের কাছে ব্যাংকটির ঐ পাওনা।
মোহাম্মদ আলীর মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশের ১৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা পাওনা আটকে গেছে। যার বেশির ভাগই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় ও চেক ডিজঅনার হওয়ায় গ্রুপটির বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়া ১০টিরও বেশি চেক ডিজঅনার মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড হয় তার
নব্বইয়ের দশকে পণ্য আমদানির ব্যবসা শুরু করেন ইমাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ আলী। ২০০০ সালের পর ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন অন্যান্য খাতেও। ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি কৃষি, খাদ্য, মোটর পার্টস ও পোশাক শিল্পের নামে ঋণ নিয়ে একের পর এক সম্পদ বাড়াতে থাকেন। কেনেন বিপুল পরিমাণ জমিও। এর মাধ্যমে ইমাম গ্রুপের সম্পদ স্ফীত হলেও পরিশোধ করেননি ব্যাংকঋণ।
চট্টগ্রামের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম দিককার ঋণখেলাপি ইমাম গ্রুপের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। পাওনা আদায়ে বেশির ভাগ ব্যাংকই ২০১২-১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে।
একসময় খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় বড় প্রতিষ্ঠান ছিল মোহাম্মদ আলীর মেসার্স ইমাম ট্রেডার্স। নব্বইয়ের দশকে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করত প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে ভোগ্যপণ্য থেকে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন পোশাক শিল্প, যন্ত্রপাতি আমদানিসহ নানা খাতে। এসব খাতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিলেও পরে সেই টাকার বেশির ভাগ বিনিয়োগ করেন জমি কেনায়।