Home Second Lead ই-কমার্স বাজার: আকার বাড়ছে বছরে বছরে

ই-কমার্স বাজার: আকার বাড়ছে বছরে বছরে

চট্টগ্রামে ৫০ টি প্রতারণার অভিযোগ জামানত ও বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার না থাকায় লোকেশন পাওয়া যায় না।


নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: অনলাইন সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশের মতো এখন বাংলাদেশেও পছন্দের পণ্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। বিপনিবিতানে না গিয়ে ঘরে বসেই সেবা মিলছে। 
পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার করলেই ঘরে পৌছে যাচ্ছে পণ্য। অনলাইন ভিত্তিক বেচাকেনা দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশে৷ কিন্তু তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগও উঠছে ৷ যার প্রেক্ষিতে এই খাতের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্যোক্তারা নিজেরাও দুশ্চিন্তায়।
তবুও সেবার মান নিশ্চিত করতে থেমে নেই এই সেবার মার্কেটিং কার্যক্রম। সারা বিশ্বে করোনাকালীন সময়েও জনগণের সেবায় নিয়োজিত অনলাইন মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো। গেলো কোরবানি ঈদে যখন সারাদেশে করোনা তাণ্ডব প্রকট ঠিক তখনই অনলাইনের মাধ্যমে যাবতীয় ঈদের কেনাকাটা সেরেছেন।
শুধু তাই নয় করোনা রোধ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে অনলাইনের মাধ্যমে পছন্দের কোরবানির পশু কিনেছেন অনেকে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী মিলছে অনলাইনে।
সোশ্যাল মিডিয়া পেইজনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে কেউ শুরু করেছেন নতুন জীবন। আবার কেউ কেউ স্থবির ব্যবসাকেও দিয়েছে গতি। স্থবির অর্থনীতিতেও বেড়েছে ই-কমার্স বাজারের আকার।
বাংলাদেশে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয়েছে এক দশকেরও কম সময়ে। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে তা জনপ্রিয় হতে শুরু করে৷
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) দেওয়া তথ্যমতে, অনলাইন লেনদেন ২০১৭ সালে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো ছিল। ২০২০ সালে এসে এই বাজার বেড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। শুধু টাকার লেনদেনই নয়, ই-ক্যাব বলছে অনলাইন বাজারের আকার ২০২০ সালে দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এর আকার ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকার। তবে করোনার সময়ে তা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে ৷ পচনশীল পণ্য থেকে শুরু করে ওষুধ, ইলেকট্রনিক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও কিনছেন মানুষ ৷ 
সংশ্লিষ্টদের অনুমানে, প্রায় এক লাখ অর্ডার প্রতিদিন আসছে৷
বাংলাদেশে কত প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স সেবা দিচ্ছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই ৷ শুরুর দিককার একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিল এর প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর জানান, চার-পাঁচ হাজারের মতো উদ্যোক্তা এখন আছে৷ এর মধ্যে অনেকেই ছোট উদ্যোক্তা যারা ফেসবুকে কাজ করে৷ আবার অনেক দেশি-বিদেশি বড় উদ্যোক্তাও গত কয়েক বছরে বিনিয়োগ করেছে৷
তবে ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা সব মিলিয়ে ১২শ এর কিছু বেশি৷ কোভিড-১৯ এর এই সময় সদস্য বেড়েছে অনেক ৷
ইন্টারনেটে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসা করে ভাগ্য বদল করেছেন যাঁরা তাঁদের একজন ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা ওমর শরিফ নাইম। করোনা আসার আগে নাইম স্থানীয় একটি স্কুলে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক ছিলেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক না হওয়ায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেতন বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। প্রথম কয়েক মাস নিদারুণ কষ্টে কাটে নাইমের। এরপর ইন্টারনেটই হয়ে ওঠে নাইমের জীবনের লাইফ লাইন।
নাইম বলেন, অনেক দিন ধরেই দেখছিলাম মানুষ ফেসবুকে এটা-সেটা বিক্রি করে। আমি অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই আমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর থেকে সেখানের বিখ্যাত প্যাড়া সন্দেশ আনি। সে সন্দেশ বিক্রির জন্য ফেসবুকে একটা পেজ খুলি। মাত্র জুন মাসে খোলা পেজ থেকে এখন আমার ভালো আয় থাকে।
করোনার প্রভাবে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক ভৌত ব্যবসা রক্ষার হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে অনলাইন।

চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্ট ও বুটিক ব্যবসায়ী সানজিদা তেমনই একজন। সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বুটিকের কিছু পণ্য নিয়ে যান বাসায়। সেগুলোই ছবি তুলে আপলোড করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আগে তাঁর ক্রেতা ছিল এলাকাভিত্তিক। এখন দেশজুড়েই তাঁর ক্রেতা। ভিডিও করে পণ্য দেখিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পণ্য বিক্রি করেন তিনি। অনলাইন–অফলাইন এখন একই কথা।


তবে অনেক অভিযোগও রয়েছে এই অনলাইন বেচাকেনায়।বিশ্বের জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইটগুলোতে পণ্য অর্ডার দেয়ার সময়ই ক্রেডিট কার্ড বা অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যমে দাম পরিশোধ করেন ক্রেতারা ৷
পরবর্তীতে পণ্যটি সময়মত ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়া হয় ৷ গ্রাহক তার চাহিদামাফিক পণ্য না পেলে ফেরত দিতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে গ্রাহক টাকা ফেরতও পান ৷ কিন্তু বাংলাদেশে চিত্রটি ভিন্ন ৷ 


বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর এক গবেষণাতে দেখা গেছে, ৭০ ভাগ অনলাইন কেনাকাটাতেই টাকা পরিশোধ হয় ক্যাশ অন ডেলিভারি বা পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর পরে ৷
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, ‘আমাদের দেশে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আর পণ্যের যে মান তাতে অগ্রিম টাকা দিয়ে গ্রাহকরা পণ্য নিতে চান না ৷ দ্বিতীয়ত, পেমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারণার অভাব রয়েছে ৷ যে কারণে সারা বিশ্বে ই-কমার্সের যে মডেল গড়ে উঠেছে আমাদের এখানে সেটা জনপ্রিয় নয় ৷
এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য ধরনের পণ্য সরবরাহ করা, নকল পণ্য দেয়া বা মান ভালো না হওয়া, সঠিক সময়ে সরবরাহ না করা, প্রলোভন দেখিয়ে হয়রানি এমন নানা অভিযোগ পাওয়া যায় বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটগুলোর বিরুদ্ধে ৷
অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যাল‌য়ের সহকারী প‌রিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান কথা হলে তিনি জানান, ফেব্রুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত ৩০০টি অভিযোগ পেয়েছি যার ৫০ টি অনলাইন প্রতারণা। এর মধ্যে ৫ টি অভিযোগ আমরা নিষ্পত্তি করেছি। বাকি অভিযোগ গুলোর অনলাইন পেজ থাকলেও তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই।
তিনি আরও বলেন, জামানত রেখে অনলাইনে ব্যাবসা না করা ও বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার না থাকার কারনে তাদের লোকেশন পাওয়া যায় না।
ই-কমার্সে সবচেয়ে বড় বিষয় হল গ্রাহকদের আস্থা ৷ তা যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে একটি দুটি প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা শিল্পের উপরই মানুষ আস্থা হারাবে ৷ তাই যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন এই খাতের সংশ্লিষ্টরা।