অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না
নাজমুল হোসেন:
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: ঈদের আর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। লকডাউন শিথিল করার পরে প্রথম দিকে শপিংমলগুলো ক্রেতাশূন্য থাকলেও ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট হচ্ছে বিপণি কেন্দ্রগুলো।
প্রতিটি মার্কেট ঘিরে এখন হাজারো মানুষের ভিড়। শুধু দিনেই নয়, রাতেও সমাগম দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত থাকলেও তা মানছেন না অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটগুলোর সামনে সচেতনতামূলক ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘করোনায় অসাবধানতায় মৃত্যু হতে পারে’৷ হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে ৷ ক্রেতারা যারা আসেন তাদের মাস্ক পরে আসতে বলা হয়৷ তারপরও অনেকেই মাস্ক পরেন না।
মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রতিদিন জেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জরিমানার পাশাপাশি মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। শনিবারও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ২৮ মামলায় ৯ হাজার ২শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ক্রেতা বিক্রেতাদের।
নগরীর বিভিন্ন অভিজাত শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। দোকান থেকে দোকানে ছুটছেন তারা।
নিউমার্কেট, সানমার ওশ্যান সিটি, টেরিবাজার, তামাকুমণ্ডি লেইন, বালি আর্কিড, মিমি সুপার মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, লাকি প্লাজা, সিঙ্গাপুর-ব্যাঙ্কক মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা, টেরিবাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার, ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স, চকবাজারসহ মার্কেট এলাকাগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। বিক্রেতারাও চায় ঈদের আগে যতটা সম্ভব পণ্যের মজুদ শেষ করতে।
নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়, বাহারি কাপড়, জুতা, টি-শার্ট, লুঙ্গী, টুপিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা কারো মধ্যেই ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। একে অন্যের গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে করছেন কেনাকাটা। অনেকের মুখে ছিল না মাস্কও।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতোমধ্যে অধিকাংশ চাকরিজীবী বেতন-বোনাস পেয়েছেন। তাই বিপণি বিতানগুলোতে ক্রেতাদের চাপ বেশি। সন্তান ও প্রিয়জনের জন্য ঈদের জামা-কাপড় এবং উপহারসামগ্রী কিনতে হলে ৩-৪ দিনের মধ্যে কিনতে হবে। এ কারণে কেনাকাটায় মার্কেটগুলো উৎসবমুখর।
চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতিসূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা মিলিয়ে সমিতির অধীনে ১ হাজার ৮শ এর মত মার্কেট রয়েছে। তারমধ্যে নগরীতে শ’খানেক মার্কেট চালু রয়েছে। এসব দোকানে পোশাক, জুতা, প্রসাধন, গয়না ও তৈজসপত্রের বেচাকেনাও জমে উঠেছে।
বালি অর্কিডের আর্ক ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী তাবাসুম আনিকা বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, ‘ঈদের আর তো বেশি দিন বাকি নেই। মানুষ অনেক দিন ঘরবন্দি ছিলো। অনেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মার্কেটে ভিড় করছে। করোনার কারণে আমাদের নিজেদেরও ভয় লাগছে। আমরা চাই ক্রেতা আসুক সামাজিক দূরত্ব মেনে, তারা মানছেন না। তবে আমরা চেষ্টা করি সবাইকে সচেতন করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালাতে।’
আগ্রাবাদের আখতারুজ্জামান সেন্টারের ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বিজনেসটুডে২৪কে জানান, দেশি পোশাকের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের প্রচুর পোশাক সংগ্রহে রয়েছে। মান ও ক্যাটাগরিভেদে দেশি পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় পোশাকগুলোর দাম শুরু হচ্ছে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দিয়ে। অন্যদিকে পাকিস্তানি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে চার থেকে আট হাজারের মধ্যে।
হালিশহর এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে টেরিবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী চিন্ময় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় কেনাকাটা করতে পারিনি। আমার পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করছি। তবে বাচ্চাদের কাপড়ের দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা।’
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধের ফলে প্রয়োজনের তাগিদেই এখন মানুষ আসছে। আমরা সবসময়ই ব্যবসায়ীদের সচেতন করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য বিক্রয়ের জন্য। যারা মানছেন না তাদের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে এবং আমরা সচেতনভাবে ব্যবসা করতে চাই।’
চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালেহ আহমেদ সুলেমান বলেন, ‘দফায় দফায় লকডাউন ঘোষণা করার কারণে ব্যবসায়ীদের মনে হতাশা নেমে এসেছিল। ঈদের আর বেশিদিন বাকি নেই। তাই ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। সবাই ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে চায়, এটা খুব স্বাভাবিক। সরকারি নির্দেশনা তো আছেই, পাশাপাশি দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও প্রত্যেক ব্যবসায়ী, মার্কেট ও শপিংমল কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বলা হয়েছে।’