Home Third Lead একজন মানবিক ইউএনও’র গল্প

একজন মানবিক ইউএনও’র গল্প

সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির
‘‘আমি কাজে বিশ্বাসী সৎ ভাবে থাকতে চাই। কোন সমস্যা মনে হলে আমার কাছে আসুন ভুল ত্রুটি দেখিয়ে দেন আমি সমাধান করবো।”
মোঃ পারভেজ হাসান, ঠাকুরগাঁও: ‘জনসেবাই জনপ্রশাসন’ এ বাক্যটির বাস্তব উদাহারণ যেন ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ। সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরীর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহোযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভের।
শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য থেকেও এভাবেই তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
যোগদানের মাত্র এক বছরের মাথায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও আর্তমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন।
হিমালয়ের কোলঘেঁষা উত্তরের জনপদ রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত আছেন ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ। সৎ-সাহস ও সদিচ্ছা থাকলে একজন মানুষই যে আস্ত সিস্টেমকে বদলে দিতে পারেন তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি।
যোগদানের বছর পার হতে না হতেই উপজেলা পরিষদ পুকুরের পাড়ে ১৫২৬ ফিট পাকা রাস্তা, বসার জায়গা, বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চারা রোপন, সৌন্দর্যবর্ধিত বাতি স্থাপন, পুকুরের পুরাতন সিঁড়িকে নতুন রূপে নির্মাণ করা। যা পুরো উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন করে অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রে (মিনি পার্কে) রুপান্তরিত করেছে।
এছাড়া আরও তার উল্লেখ্যযোগ্য কাজ সমূহ হলো:  উপজেলা পরিষদের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ,উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিস সংলগ্ন আগত সুবিধাপ্রার্থী নারীদের জন্য বসার স্থানসহ ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নির্মাণ,উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গরু ছাগলের সেট তৈরি করা, রামলাই দীঘিতে রেস্ট হাউজ তৈরি করা এবং সৌন্দর্য বর্ধন কাজ করা, উপজেলা পরিষদের ১’টি মেইন গেট ও ২’টি ওয়েলকাম গেট নির্মাণ কাজ , ৫’জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ, ৩০’জন ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী পরিবারকে এক সঙ্গে আবাসনের ব্যবস্থা,বঙ্গবন্ধুর নাম(M-মুজিব) অক্ষর আকারে নেকমরদের ঘনশেমপুরে ২৮’টি আশ্রায়ন প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ ও হস্তান্তর, উপজেলা পরিষদে বহিরাগত মহিলাদের নামাজের ঘর নির্মাণ, পরিষদের ভিতরে সমস্ত কোয়াটার সংস্কার ও রং করা,  প্রায় ৩০ জন চলাফেরায় অক্ষম প্রতিবন্ধী ও অসহায় পঙ্গু ব্যক্তিকে ১টি করে হুইল চেয়ার প্রদান, উপজেলার সহোদর গ্রামে একটি ১টি নূরানী মাদ্রাসা ও পাঠশালা স্থাপন,  দীর্ঘদিন পড়ে থাকা হোসেনগাঁও ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে ৫০ মিটার রাস্তা মেরামত যা ওই এলাকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তবরূপ দান। এছাড়াও দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত কেউটান গ্রামের ভিতর দিয়ে ইট ও বালুমাটি দিয়ে একটি মসজিদের প্রায় ৮০০ মিটার রাস্তা নির্মাণসহ মেরামত, সহোদর গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়া বহুদিনের অবহেলিত ৭০০ ফিট রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ এবং ওই গ্রামে মৃত ব্যক্তিদের জানাযায় যাওয়ার জন্য ৬০০ ফিট রাস্তা মাটি ও ইট দিয়ে তৈরী। বিআরডিবি পুরো অফিস সংস্কার ও রংকরণ, রাণীশংকৈলে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রায় ১৯ একর শাল বাগানের বাউন্ডারী প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু, যা ইতোমধ্যে প্রায় ৮’শ মিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জওগাঁও গ্রামে ২ জন, পৌরসভায় ১জন, আশিক নামে ভিক্ষুক ১ জন, আমজুয়ানে ১জন, সহোদরে ১জন, সন্ধ্যারই ১জন সহমোট ৬টি পরিবারকে ২ বান করে ঘরের ছাউনি বাবদ টিন প্রদান। পৌর শহরে ৯০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ গরীব বাদাম বিক্রেতাকে নলকূপ প্রদানসহ আরো অনেক হতদরিদ্রকে নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা করে দেয়া। উপজেলা পরিষদে ১টি বাইসাইকেল স্ট্যান্ড নির্মাণ।  বহুদিন ধরে উপজেলার ডাকঘরটি জরাজীর্ণ সাইনবোর্ড ও রংবিহীন ছিলো। সেটি রংকরণ ও সাইন বোর্ড লাগানো। উপজেলা ক্যাম্পাস এর ভিতর বেচেলর অফিসারদের জন্য থাকা ৪ টি ইউনিট সম্বিলিত জরাজীর্ণ কোয়াটারে পুরাতন টিন সরিয়ে নতুন টিন লাগানোসহ বৈদ্যুতিক ওয়েরিং, প্লাষ্টার মেরামত, খাওয়ার ডাইনিং, ও রংকরণ করা। অনেক গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে সহযোগিতা এবং গরীব অসহায় হতদরিদ্র, বিজয় দিবস উপলক্ষে ১’শ জন নারীকে সেলাই মেশিন দেয়া এবং পারিবারিক স্বচ্ছতার জন্য অনেক অসহায় নারীদের মাঝে হাঁস-মুরগী ও ছাগল বিতরণ। পাঁচ জন  হতদরিদ্র বেকারকে দোকান করার জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া ৫’জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে আর্থিকভাবে ভর্তি হতে সহযোগিতা করা।
জনবান্ধব ইউএনও ষ্টিভ কবিরের এ ব্যতিক্রম কর্মোদ্যম, সৎ ও দায়িত্বশীলতা প্রত্যন্ত এ উপজেলায় দিন দিন যোগ হ্চ্ছে উন্নয়নের নতুন মাত্রা। তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র।
কথাবার্তায় মার্জিত ও আচরণে অত্যন্ত ভদ্র এই মানুষটি মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে উপজেলাবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন। সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা, অভিযোগ ও আশ্রয়স্থলের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন ইউএনও স্টিফ কবির। বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো জমকালো এবং দৃষ্টিনন্দন করে পালন করার নজির সবার মুখে মুখে। উপজেলাজুড়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। একজন সরকারি কর্মকর্তার প্রতি সাধারণ মানুষের এতটা আবেগ, এতটা ভালোবাসার প্রমাণ মিলেছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকার সময়। ওনার অসুস্থতায় যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছিল সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। যেন কোন নিকটাত্মীয় প্রিয়জন অসুস্থ হয়েছেন!
সুস্থ হয়ে যোগদান পর পুনরায় উপজেলায় তার উপস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকান্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। রনীশংকৈল উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। জনবান্ধব এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সৎ জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিচক্ষণ ব্যক্তিরা। একজন ইউএনও কতটা কাজপাগল ও জনপ্রিয় হতে পারেন তার উজ্জল দৃষ্টান্ত ইউএনও স্টিভ কবির। সে কারণে এ এলাকার মানুষ আস্থা ও নির্ভরতার ঠিকানা হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন তাকে।
২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তিনি রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর এ বছরের ২৯ মে হঠাৎ জটিলভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয়   হৃদরোগ হাসপাতাল ঢাকা থেকে ওপেন হার্ট অপারেশন করে প্রায় ৩ মাস পর অসুস্থ হয়ে নিজ কর্মস্থল রাণীশংকৈলে ফিরে আসেন। যোগদানের পর থেকে অসুস্থ অবস্থায় থেকেও থেমে নেই তার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম।
আমাদের এ দেশে একদল অযোগ্য লোকের চাইতে একজন যোগ্য লোক, একদল অসৎ লোকের চাইতে, একজন সৎ লোক, একদল অলস লোকের চেয়ে একজন কর্মঠ কাজের লোকের প্রয়োজন। সর্বোপরি ভীষণ দরকার কাজপাগল একজন বিশুদ্ধ মানুষের। যার অন্যতম উদহারণ ইউএনও স্টিভ।
এ বিষয়ে ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন,আমি কাজে বিশ্বাসী সৎ ভাবে থাকতে চাই। কোন সমস্যা মনে হলে আমার কাছে আসুন ভুল ত্রুটি দেখিয়ে দেন আমি সমাধান করবো।রাণীশংকৈলবাসী আপনারা গুজবে কান দিবেন না।