Home সারাদেশ এতিমের টাকা লুট

এতিমের টাকা লুট

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

দুমকি ( পটুয়াখালী):  ভুয়া এতিমের তালিকা দেখিয়ে ৬টি এতিমখানা ও শিশুসদনে বরাদ্দের ১৬ লক্ষাধিক টাকা লোপাট করা হয়েছে। এতিমখানা ও শিশুসদনগুলোর পরিচালক ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া এতিমের তালিকার বিপরীতে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন ও লোপাটের এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাস্তবে দেখা গেছে, এ ৬টি এতিমখানা ও শিশুসদনের মধ্যে ৪টি এতিমশূন্য, একটিতে ৪ জন ও অপর একটি লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ১৪ জন শিক্ষার্থী আছে। গত রবিবার ও গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরের সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য মতে, পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় সরকারি ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত ৬টি এতিমখানা রয়েছে। শিশুসদনগুলো হচ্ছে আঙ্গারিয়া ছালেহিয়া ইসলামিয়া শিশুসদন, আলগি মোহাম্মাদিয়া শিশুসদন, পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া শিশুসদন, মুরাদিয়া আছিয়া খালেক ইসলামিয়া শিশুসদন, আঙ্গারিয়া হাজী হাতেম আলী এতিমখানা ও শিশুসদন এবং কার্তিকপাশা মাওলানা আবদুল গণি শিশুসদন।

এসব প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের আওতায় এতিম দেখানো হয়েছে ১৩৮ জন। বরাদ্দের অনুকূলে এতিমখানার ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী পিতৃ-মাতৃহীন মোট দরিদ্র শিশুর ৫০ শতাংশ বরাদ্দ পাওয়ার বিধান রয়েছে। প্রতি মাসে প্রত্যেক এতিম শিশুর মাথাপিছু দু’হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৬ মাসে ১২ হাজার করে বছরে দুই বারে মোট ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। যা ব্যয় হওয়ার কথা ওই শিশুদের খাবার, পোশাক, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদ। উপজেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬টি শিশুসদনে মোট ১৩৮ জন এতিমের জন্য ৩৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

উপজেলার পূর্ব কার্তিকপাশা মাওলানা আবদুল গণি শিশুসদনটিতে কাগজে-কলমে ১৪ জন এতিম দেখানো হয়েছে। কিন্তু গত রবিবার সেখানে গিয়ে একজন এতিমেরও দেখা মেলেনি। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো রান্নাও হয়নি। নেই কোনো বাবুর্চিও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, গত কয়েক বছরে এখানে আমরা কোনো এতিম শিশুকে থাকতে দেখিনি। শিশুসদনের পরিচালক মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, একটু সমস্যা থাকার কারণে আপাতত এতিমখানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

মুরাদিয়ার আছিয়া খালেক ইসলামিয়া শিশুসদনে গিয়ে মিলল একই চিত্র। তবে একেবারে শূন্য নয়, কাগজে-কলমে ১৭ জন এতিম থাকলেও বাস্তবে ২ জনের দেখা মিলেছে। অনুপস্থিত ১৫ জন এতিম কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আবদুস সালাম কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

দুমকি হাজী হাতেম আলী এতিমখানা শিশুসদনের তালিকায় ১২ জন এতিম দেখানো হয়েছে। সেখানে একজন এতিমেরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আসলাম অকপটে স্বীকার করেন, অন্যদের দেখাদেখি আমি ১২ জনের তালিকা দিয়েছি।

পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া শিশুসদনের তালিকায় ২০ জন এতিম দেখানো হলেও বাস্তবে আছে মাত্র ৪ জন। এছাড়াও আলগী মোহাম্মাদিয়া শিশুসদন ও আঙ্গারিয়া ছালেহিয়া শিশুসদনেও তালিকা অনুযায়ী এতিম পাওয়া যায়নি।

দুমকি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জুনায়েদ ইবনে আজিজ বলেন, এতিমদের হিসাবে গরমিল থাকায় বর্তমানে ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। যোগসাজশ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নটি অবান্তর।

দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ইতিমধ্যে ভাতা বন্ধ রয়েছে এবং ভুয়া তালিকার তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।