বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
আখাউড়া: দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর আহ্বান জানিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়েছেন এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নিজের ও স্ত্রীর একটি ছবি। তার স্ত্রী উর্মি দেবও একজন পুলিশ কর্মকর্তা। কর্মরত আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশের এএসপি হিসেবে।
পোস্ট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ভাইরাল হয় এসআই জিতু ঘোষের স্ট্যাটাস ও ছবি। প্রশংসায় ভাসতে থাকে তার বক্তব্য। অনেকেই কমেন্ট করে জানান- এ পুলিশ দম্পতি নারীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলেছেন। জিতু-উর্মি দম্পতিকে শুভকামনা জানান সবাই।
নিজের ও স্ত্রী এএসপি উর্মি দেবের ছবি পোস্ট করে এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু লিখেছেন- আমি সাব-ইন্সপেক্টর উজ্জল ঘোষ। ছবিতে আমার সঙ্গে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি উর্মি দেব, অ্যাসিস্টেন্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ বাংলাদেশ পুলিশ (এএসপি)। পেশাগত জীবনে তিনি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর ব্যক্তিগত জীবনে তিনি আমার সহধর্মিণী।
পুলিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারণা আছে তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমার সহধর্মিণীর অবস্থান আমার থেকে কতটা উপরে। না, আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারো চাকরি হয়নি। আমার আর আমার সহধর্মিণীর অবস্থানের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন। বেহিসেবী ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছেন আমার জীবন। দাম্পত্য জীবনে আমার থেকে সুখী বোধ করি আর কেউই নেই (একান্ত আমার নিজস্ব চিন্তাচেতনা)।
এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও এএসপি উর্মি দেবের বিয়ের ছবি
যখন অহরহ পোস্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না আমার তখন খুব হাসি পায় মায়ের জাত নিয়ে কী আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে। একজন বিসিএস কর্মকর্তা যে কিনা আমার মতো একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মেয়ে। আশির্বাদ প্রার্থী। ♥
এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতুর বাড়ি ফরিদপুর সদরে, কর্মরত আছেন কুমিল্লার মীরপুর হাইওয়ে পুলিশে। এএসপি উর্মী দেবের বাড়ি চট্টগামে, কর্মরত আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশে। আগে থেকেই পরিচয় ছিল দুজনের। এঁকে অপরকে পছন্দও করতেন। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি এসআই পদে যোগদানের পর নিজেদের পছন্দের কথা বাড়িতে জানান জিতু ও উর্মি। পরে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর।
ফেসবুকে পোস্ট সম্পর্কে এসআই জিতু বলেন, অন্যান্য পোস্টের মতোই এই পোস্টটি দিয়েছিলাম। এভাবে আলোচনায় আসবে বুঝতে পারিনি। তবে বিষয়টি মানুষ পজিটিভলি নিয়েছে। পুলিশিং-এর বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে আমরা অনেক সুখী। আমার স্ত্রী খুবই সৎ ও ভালো মানুষ। আমার মতো একজন নগন্য মানুষকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলেই নির্লোভ ও নিরহংকার।
তিনি আরো বলেন, নারী বা পুরুষ নয়। এভাবে যদি প্রত্যেকে নিজ স্থান থেকে এগিয়ে আসেন তাহলেই সমাজ বদলে যাবে। সামাজিক বেড়াজালে আটকে থাকা কুসংস্কার আর অহংকার নামক ব্যাধির পতন হবে।
এএসপি উর্মি দেব বলেন, বিসিএসের পর এএসপি হিসেবে আখাউড়া সার্কেলেই আমার প্রথম পোস্টিং। ছবিটি আমার স্বামী আমার অফিসে এসে তুলেছিলেন। আমি চাকরিতে যোগদানের পর তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তার যোগদানের পর আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমরা বুঝে-শুনেই বিয়েতে সম্মত হয়েছি। কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই আমরা সংসার করছি। দুইজন একই পেশায় থাকায় এঁকে অপরকে বুঝতে সহজ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, একটি সম্পর্ক স্থায়ী পরিণতি পাওয়া অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। আমরা শিক্ষিত মানুষ হয়ে যদি দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টাই, তাহলে কে পাল্টাবে? সবার আগে নিজের মানসিকতা বদলাতে হবে। তাহলেই সমাজ বদলে যাব।
ফেসবুকে ভাইরাল এ পুলিশ দম্পতির ছবি ও পোস্ট সম্পর্কে আখাউড়া পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল বাবু বলেন, আমি এএসপি উর্মি দেবকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন একজন মানুষ। সমাজ বদলে দিতে তার মতো মানুষই প্রয়োজন।