মাস্কাট ( ওমান ):
ওমানে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ করা এবং ফ্রি ভিসার ফাঁদে না পড়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব-ওমান’র সভাপতি সিরাজুল হক।
বিজনেসটুডে২৪ এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে নারী কর্মীরা ওমানে যাচ্ছেন তাদের অনেকের কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, আমাদের সম্মানহানি হচ্ছে। এখানে এসে নারীকর্মীরা অনেকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। সেখান থেকে বের হয়ে অনৈতিককাজে জড়িয়ে পড়ছে কেউ কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়ে। এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ওমানে নারীকর্মী গমনের হার খুব বেশি নয়, দেশেই এদের কর্মসংস্থান হতে পারে। সরকারের বিষয়টিতে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
নারীকর্মী পাঠানোর নীতিমালা প্রয়োজন
সিরাজুল হক বলেন, নারী কর্মী বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট এবং কঠোর নীতিমালা থাকতে হবে ভারত ফিলিপাইনের মত, যাতে আমাদের দেশের এসব নারী কর্মী কোন অবস্থাতে নিগৃহীত, নির্যাতিত না হয়। আর নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ রাখা প্রয়োজন এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মান সম্মান রাখার স্বার্থে।
‘ফ্রি ভিসা’ বলে কিছু নেই
সোশ্যাল ক্লাব সভাপতি জানান, এদেশে ফ্রি ভিসা বলে কিছু নেই। কতিপয় দালালের কারণে কথিত ফ্রি ভিসার ফাঁদে পড়ে এখানে এসে বহু বাংলাদেশি চরম দুর্গতিতে পড়েছেন। দালালরা বলে থাকে ‘ ফ্রি ভিসায় ওমানে গিয়ে খুশিমত যে কোন কাজ করতে পারবেন, বেশি অর্থ উপার্জনের বিপুল সুযোগ ফ্রি ভিসায়।’ এদের ফাঁদে পড়ে লোকজন এখানে এসে দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এদেশের আইন হলো যে কোম্পানিতে আসবে সে কোম্পানিতে কাজ করতে হবে, এক কোম্পানির কর্মী হয়ে অন্য কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ নেই। যে কোম্পানির আইডি কার্ড পকেটে সে কোম্পানিতে কাজ করতে হবে। অন্য কোম্পানিতে যাওয়া মানে অবৈধ। অর্থাৎ যে কোন সময় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে। কথিত ফ্রি ভিসার নামে এসে বহু লোক অবৈধ হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এখানে ওখানে। অবশ্য কিছু লোক প্রতিশ্রুত বেতন-ভাতা না পেয়ে অন্যত্র কাজের সন্ধানে নেমে পড়েছে। কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু লোক বেকার হয়ে পড়েছে। বড় বড় বহু কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে আর্থিক সংকটে পড়ে। এসব কোম্পানির কোন কোনটিতে এক হাজার বাংলাদেশি কর্মী। তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ দুতাবাসের সহযোগিতায় এদেরকে দেশে পাঠানো হচ্ছে।
অদক্ষ কর্মীর সংখ্যাই বেশি
দুতাবাসের হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক মাসে বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কর্মী আসছে। কিন্তু অল্প কিছুসংখ্যক বাদে সব অদক্ষ কর্মী। এদের চাহিদা কম। দক্ষ কর্মী আসার সাথে সাথে কাজ পেয়ে যায়, বেতনও তাদের ভাল। অদক্ষদের কাজের সুযোগ কম। বেতনও কম। রাজধানী মাস্কাটে অনেক বাংলাদেশি খুব ব্যবসা করছেন, বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। একসময় তারা দক্ষ হিসেবে এখানে এসে পর্যায়ক্রমে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছেন বলে জানান সিরাজুল হক।
দূতাবাসে জনবল সংকট
সোশ্যাল ক্লাব সভাপতি বলেন, প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি এখানে। সেই তুলনায় দুতাবাসে জনবল নেই। প্রবাসীদের প্রত্যাশিত সেবা দিতে স্বল্প জনবলকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রবাসীরাও দ্রুত কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। অবশ্য, দুতাবাসে যারা রয়েছেন তাদের আন্তরিকতায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই।
সোশ্যাল ক্লাবের নানা তৎপরতা
জানালেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ওমান সরকারের স্বীকৃত একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব। শাখা রয়েছে সালালায়ও। সেখানে কর্মরত বাংলাদেশিদের নানা বিষয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে ক্লাব। যারা আমাদের কাছে সমস্যা নিয়ে আসে, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাদেরকে সহযোগিতা করি। ক্লাবের নিজস্ব কোন তহবিল নেই। তারপরও আমরা সহযোগিতার হাতবাড়িয়ে দেই। সাহায্য করার চেষ্টা করি। সোশ্যাল ক্লাবের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রবাসীদের ওমানের আইন কানুন সম্পর্কে সচেতনকরা, দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা, কেউ যাতে কোন রকম অপরাধে না জড়ায় সে ব্যাপারে সতর্ক করা ইত্যাদি নিয়মিত তৎপরতার অংশ। এছাড়া, বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো যথাযথ মর্যাদায় পালন করে দুতাবাস। কোন কোন কারণে এক সময়ে দুতাবাসের সাথে ক্লাবের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেটা আমরা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হয়েছি।
বহু প্রবাসী কারাগারে
সিরাজুল হক উল্লেখ করেন, বেআইনি কাজে জড়িয়ে বহু বাংলাদেশি ওমানের বিভিন্ন স্থানে কারাবাস করছে। ‘ঔষধের চালানি’ নিয়ে এসে অনেকে বিপদে পড়েছেন। চালানির নামে তাদের হাতে দেয়া হয়েছে ইয়াবা বা অন্য কোন মাদক। এ রকম অনেককে বিমান বন্দর থেকে সরাসরি কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তাই তিনি দেশ থেকে আসার সময় ‘চালানি’র ব্যাপারে সর্বেচ্চ সতর্কতার আহ্বান জানান নতুন পুরাতন প্রবাসীদের প্রতি।
বিজনেসটুডে২৪