চট্টগ্রাম: করোনা ভ্যাকসিন বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দেশব্যাপী ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন ও এর কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্থানীয় চাহিদা ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ, ভ্যাকসিন বিতরণের তালিকা প্রনয়ণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং কমিটিতে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান উপরোক্ত দাবি জানান।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনায় লকডডাউন চলাকালে সরকার জেলা-উপজেলা পর্যায়েও কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিজেদের অনুগত, পোষ্য ও সমর্থকদের নাম দিয়ে কমিটির তালিকা তৈরি করে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করলেও কার্যত এই কমিটি কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, লকডডাউন চলাকালীন ত্রাণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, চিকিৎসা, প্রণোদনাসহ করোনা মহামারী প্রতিরোধ কার্যক্রমে এই কমিটির কোনো তৎপরতা বা কোনো কার্যক্রম গ্রহণ বা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল কিনা জানা যায়নি। আর কমিটির সভাপতি কর্তৃক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে নিয়োগের বিধান হলো কমিটির সভাপতির নিরংকুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা। অনেকে নিজের সন্তান, আত্মীয়-স্বজনকে এ সমস্ত কমিটিতে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি বানিয়ে কমিটি গঠন করেন। যার চুড়ান্ত পরিণতি এই কমিটি কাগজেই সীমিত থাকে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, কোভিড- ১৯ এর চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি উপকরণ, পিপিই ও অন্যান্য কেনাকাটায় স্বাস্থ্যখাতে অবারিত দুর্নীতির ঘটনার পুণরাবৃত্তি রোধে কার্যকর উদ্যোগ দরকার। একই সাথে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী-পিপিই বিতরণে যে রকম হজবরল অবস্থা ও নানারকম অনিয়ম হয়েছিল, ঠিক একই অবস্থা পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার সময়। এবারও করোনার ভ্যাকসিন বিতরণে ফ্রন্টলাইনারের তালিকা প্রণয়ন ও যোগ্য প্রকৃতদের হাতে টিকা পৌঁছানো সম্ভব কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তাই কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি, প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রকৃতযোগ্যদের হাতে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিতে যে কোনো মূল্যে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে প্রযোজ্য আইন ও বিধি অনুসরন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন করোনা একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা বিগত ০১ বছরে কোনো সভা অনুষ্ঠান বা এ ব্যপারে কোনো কার্যক্রম গৃহীত হবার সংবাদ নেই। সে কারণে জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যত মৃত। অথচ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যাগুলি সমাধানে স্থানীয় উদ্যোগে করণীয় নির্ধারন ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য এই কমিটি গঠিত হলেও ফলাফল শুন্য। এখন সব বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
ক্যাব নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভোক্তা সরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুসারে ক্যাব দেশের ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং এফবিসিসিআই ও ওষুধ শিল্প সমিতি দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। সরকারের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটি গঠনের সময় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্ন চেম্বার ও এফবিসিসিআই এর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হলেও ভোক্তাদের প্রতিনিধি হিসাবে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতির অনুগত ও পোষ্য একজনকে মনোনিত করা হয়। যার কারণে ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় না। অনেক সময় কমিটিগুলো সরকারের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল লোকজন ও ব্যবসায়ীদের দেন-দরবারের আসর হিসাবে পরিণত হয়। সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থগুলো এখানে চরমভাবে উপেক্ষিত। তাই জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা না হলে তৃণমূলে জবাবদিহিতা, সুশাসন ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় সরকারের মহতী উদ্যোগুলোর সুফল সাধারণ জনগণ পাবে না।
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি