বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: করোনায় দেশের সাড়ে ৩ লাখ পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন বলে দাবি করেছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এই সংখ্যা খাতটিতে মোট শ্রমিকের ১৪ শতাংশ। গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল সভায় জরিপে পাওয়া এই তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডি এবং ব্র্যাকের ম্যাপড ইন বাংলাদেশ প্রকল্প এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা আয়োজন করে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংকট শুরুর সাত মাস পর গত অক্টোবরে জরিপ পরিচালনা করে শ্রমিকদের বেকারত্বের এই চিত্র পায় সিপিডি।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই সময় ২৩২টি বা ৭ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়েছে। লে-অফ ঘোষণা করেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ কারখানা। বন্ধ হওয়া এসব কারখানার মধ্যে ৭০ শতাংশ তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পেরেছে। আর কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের আরও যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা, তা দিতে পেরেছে মাত্র ৪ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জের বড় কারখানাগুলোতে এই সমস্যা দেখা গেছে বলে জানান তিনি। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানার উদ্যোক্তাদের কীভাবে আবার ব্যবসায় ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সরকারের নজর আশা করছে সিপিডি।
মোয়াজ্জেম বলেন, মহামারীতে বন্ধের পর কারখানা পুনরায় খুললেও ৬০ শতাংশ কারখানায় নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শুরুতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা পরিমাপের উদ্যোগ নিলেও ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে।
সিপিডির জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ শতাংশ কারখানা এখন মহামারী প্রতিরোধে কোনো নিয়ম মানছে না। এই সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে। সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পেতে ৫২ শতাংশ কারখানা আবেদনই করেনি বলে সিপিডির জরিপে উঠে এসেছে। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ৩৩ শতাংশ কারখানা ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করেনি। ছোট একটি অংশ বলেছে, ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারার শঙ্কায় তারা আবেদন করেনি। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এখনো ৫০ শতাংশ কারখানা মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে না। জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৪৪ শতাংশ পোশাক কারখানার নিশ্চিত অর্ডার থাকে। ৫৬ শতাংশ কারখানার থাকে না। মহামারীর প্রভাবে ৫ শতাংশ কারখানা তাদের ব্যবসার আকার ছোট করার কথা বলেছে। তবে মাত্র ৪ শতাংশ ব্যবসার নতুন সুযোগ পাওয়ার কথা বলেছে। ড. মোয়াজ্জেম বলেন, তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি আবারও দুই অঙ্কে যেতে পণ্যের বৈচিত্রায়ন করতে হবে।
সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, মহামারীর প্রথম দিকে পোশাক খাতের কিছু কারখানা বন্ধ হলেও এখন আবার পর্যায়ক্রমে সেসব কারখানা খুলতে শুরু করেছে। অর্ডারও আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো শ্রমিকদের ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন নিশ্চিত করেনি মালিকরা। বিকেএমইএর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হাতেম বলেন, সরকার পোশাক খাতের জন্য যে বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, তা পাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে তারাই ওই ঋণ পাচ্ছেন আবার যাদের সঙ্গে নেই তারা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এখন এই খাতের সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হচ্ছে- ক্রেতাদের দাম কমিয়ে দেওয়া, অন্যদিকে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া। সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান এই মহামারীর সময়েও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এক জায়গা থেকে কাঁচামালের উৎস হলে এটা করবেই। তাই কাঁচামালের উৎসে বৈচিত্র্য আনতে হবে। ম্যাপড ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুল হোসাইন সভাটি সঞ্চালনা করেন।