Home করোনা আপডেট করোনা রুখতে পারে ব্ল্যাক টি

করোনা রুখতে পারে ব্ল্যাক টি

কলকাতা: আপনি কি ঘনঘন চায়ের কাপে চুমুক দিতে অভ্যস্ত? এমনটা হলে আপনার জন্য সুখবর শোনাচ্ছে চা গবেষণা সংস্থা (টিআরএ)। ভারতের শতাব্দীপ্রাচীন অসমের জোড়হাটের টোকলাইয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে ব্ল্যাক টি-তে এমন তিনটি উপাদান রয়েছে যেগুলি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরিতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, শরীরের ভিতরে ভাইরাসের রেপ্লিকা তৈরি আটকাতেও জুড়ি নেই ব্ল্যাক টির। টিআরএর টোকলাই গবেষণাকেন্দ্রে করোনা ভাইরাসের ওপর ব্ল্যাক টির প্রভাব নিয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট চা বিজ্ঞানীদের একটি দল গবেষণা করে ওই সিদ্ধান্তে এসেছে। তাঁদের গবেষণাপত্রটি গত বুধবার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল বায়োমলিকিউলার স্ট্রাকচার অ্যান্ড ডায়নামিক্স-এ প্রকাশিতও হয়েছে।

চা মহল জানাচ্ছে ব্ল্যাক টি মূলত দুই প্রকার। একটি সিটিসি ও অপরটি অর্থোডক্স। দুই ধরনের চা-ই ফ্যাক্টরিতে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। টিআরএর গবেষণালব্ধ ফলাফল বলছে, ব্ল্যাক টির মধ্যে এমন তিনটি উপাদান রয়েছে যা করোনা ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাবকে আটকাতে পারে। অনেকটা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের মতো ওই তিনটি উপাদন কাজ করে। ব্ল্যাক টির ওই তিনটি উপাদান বা টি বায়ো-অ্যাক্টিভ ভাইরাল রিসেপ্টর প্রোটিনের সঙ্গে এমন কিছু বন্ড তৈরি করতে পারে যা ভাইরাসের সক্রিয়তা নিস্তেজ করতে বা ভাইরাসের রেপ্লিকা গঠন ঠেকাতে সক্ষম। টিআরএর নির্দেশক ডঃ একে  বড়ুয়া বলেন, ব্ল্যাক টির থিয়াফ্লেভিন, প্রোসায়ানিডিনের মতো উপাদানের অ্যান্টিভাইরাল ধর্ম গবেষণায় ধরা পড়েছে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ক্ষমতা সহ রেপ্লিকা গঠন আটকাতে ব্ল্যাক টির ৩টি উপাদান যে কাজ করে সেটাও প্রমাণিত। আরও বিস্তারিত গবেষণা চলবে। টিআরএর সম্পাদক জয়দীপ ফুকন বলেন, চিন ও তাইওয়ানের পর টিআরএ-ই দেশের কোনও একটি প্রতিষ্ঠান যারা ব্ল্যাক টি যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যক্ষম তা প্রমাণ করল। এই বিষয়টি আমাদের প্রত্যেকের কাছেই গর্বের।

টিআরএ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গোটা বিশ্বের নিরিখে ভারতেই সবচেয়ে বেশি ব্ল্যাক টি তৈরি হয়। স্বাস্থ্যকর নানা গুণ থাকায় চা-কে জাতীয় পানীয় হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও দীর্ঘদিনের। ভারতের চা পানকারীদের মধ্যে ব্ল্যাক টির কদর সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে গ্রিন টি-ও রয়েছে। বর্তমানে অবশ্য হোয়াইট, ইয়েলো, পার্পলের মতো আরও নানা স্পেশাল চা তৈরি হচ্ছে। টিআরএর নাগরাকাটা শাখার উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক গবেষণা ও উন্নয়নকেন্দ্রের অ্যাগ্রনমি বিভাগের প্রধান ডঃ সোমেন বৈশ্য বলেন, ওই গবেষণালব্ধ ফল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বলা যেতে পারে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন হল।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ডাঃ সুশান্ত রায় বলেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে টিআরএর গবেষণার যোগসূত্র স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়টি সম্পর্কে এখনই কোনও মন্তব্য করব না।

ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিস্টা)-এর সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, এর আগে আইআইটির দিল্লি ক্যাম্পাসও করোনা ভাইরাসের ওপর চায়ের উপাদানের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। টিআরএর মতো চায়ের ওপর গবেষণার প্রতিষ্ঠানও আশাপ্রদ ফলাফলের কথাই জানাল। তাদের গবেষণাকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে ধরে টি বোর্ড যাতে সর্বত্র ব্ল্যাক টি পানের সুফল নিয়ে  জোরদার প্রচারে নামে সেই দাবি জানাচ্ছি। চা শ্রমিকদের যৌথ সংগঠন জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, চা এমন একটি পানীয় যা পুরোপুরি জৈব। তৈরির সময় অন্য কোনও কিছু মেশানো হয় না। এই পানীয়র অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ধর্মের কথা সুবিদিত।