বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
সমাজে এমন অনেক বিচিত্র জিনিস আছে যা মানুষের অজানাই। বেশিরভাগ রীতি রেওয়াজ আসে কুসংস্কার থেকে। বিভিন্ন দেশে এমন অনেক কুসংস্কার বা বিশ্বাস ছড়িয়ে আছে যা মানুষ আজও মেনে চলে। বিশেষত বৃষ্টির জন্য মানুষের কাতর আকুতি বহু কুসংস্কারের জন্ম দিয়েছে। ধীরে ধীরে সেইগুলিই রীতিতে পরিণত হয়েছে। যেমন গাধা, ব্যাঙ বা কাকের মতো প্রাণীদের বিয়ে দেওয়া।
বৃষ্টি দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে প্রচুর নৈবেদ্য দেওয়া, ভারতের বহু গ্রামে আজও এমন রীতি জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। কর্নাটকের একটি গ্রাম এইসব কিছুর ঊর্দ্ধে। তাদের রীতি শুনলে চোখ কপালে উঠে যাবে।
বৃষ্টি দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে কর্নাটকের ওই গ্রামে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে তার মুখে পানি দেওয়া হয়! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যিই। আজও কর্নাটকের কালকেরি গ্রামে এমন প্রথা চলে আসছে। দিন কয়েক আগের কথা, গোটা কর্নাটক রাজ্য যেখানে প্রবল বর্ষণের জেরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে কোনও কারণে কালকেরি গ্রামে বৃষ্টির দেখা নেই। গ্রামবাসীরা মূলত কৃষক, তাই বৃষ্টি না হওয়ায় স্বভাবতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
উপায় খুঁজতে থাকেন কী করবেন। শুরু হয় শলা পরামর্শ। অনেক আলাপ আলোচনার পর গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেন বৃষ্টি দেবতা কোন কারণে তাঁদের ওপর রুষ্ট হয়েছেন, তাই তাঁদের গ্রামে অভিশাপ লেগেছে। কী করা যায়, তখনই প্রচলিত হয় এই রীতি। গ্রামের কোনও এক ব্যক্তি পরামর্শ দেন যে, মৃতদেহের মুখে পানি দিলে অভিশাপ দূর হবে!
গ্রামবাসীরা সেই কথাই মেনে নেন। বিগত কয়েকদিনে গ্রামে যত জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের একটা তালিকা তৈরি করেন গ্রামবাসীরা। তারপর কোদাল শাবল দিয়ে শুরু হয় মাটি খোঁড়া। কবরের পাশে দু’ফুটের গর্ত করে তার মধ্যে দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে মৃতদেহের মুখে পানি দেন তাঁরা । এমন করতে করতে যখন শেষ মৃতদেহের মুখে পানি ঢালার কাজ সম্পন্ন হয় তখনই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে! ঘটনাটা কাকতালীয় হলেও সেই বিশ্বাস মানুষের মনে গেঁথে যায়।
১৫০০ লোকের বাস এই কা গ্রামে। মূলত তুর ডাল চাষ করে জীবন জীবিকা অতিবাহিত করেন তাঁরা। এই চাষের জন্য বৃষ্টি খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু কর্নাটকের অন্য জায়গায় বৃষ্টি হলেও এই গ্রামে সেভাবে বৃষ্টির দেখা ছিল না। প্রচলিত কথা, কয়েক বছর আগে গ্রামেরই এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পর মুখ খোলা ছিল। সেই অবস্থাতেই তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। সে বছর গ্রামে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। গ্রামের মোড়ল তখন জানিয়েছিল, ওই বৃদ্ধের মৃতদেহ তৃষ্ণার্ত তাই এই খরা পরিস্থিতি।
সেই তখন মাটি খুঁড়ে ওই বৃদ্ধের মুখে পানি ঢেলে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। পর মুহূর্তেই, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে ওই গ্রামে। সেই থেকে এই গ্রামে আজও এই রীতি চলে আসছে। বর্ষায় বৃষ্টি না হলে গ্রামবাসীরা এমন কাণ্ডই ঘটান। এবছরও তার অন্যথা হয়নি।