Home Third Lead তালাবদ্ধ ঘরে শেকলবন্দী এক হতভাগ্য বাবা

তালাবদ্ধ ঘরে শেকলবন্দী এক হতভাগ্য বাবা

কেন্দুয়া ( নেত্রকোণা ) থেকে সংবাদদাতা: তালাবদ্ধ ঘরে শেকলবন্দী আবু মিয়া (৭০) নামে এক বাবাকে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করল বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন। শনিবার বিকেলে কেন্দৃয়ার চিরাং ইউনিয়নের মনাটিয়া গ্রাম থেকে এই বাবাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী ও এক ছেলেকে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আবু মিয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন। তার বড় ছেলের নাম সেলিম, মেজ ছেলে শাহীন ও ছোট ছেলের নাম মামুন। অবসরের পরে গ্রামের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন আবু মিয়া। অনেকবার তার ছেলেরা তাকে মারধর করেছেন। সবশেষ গত তিন মাস ধরে এলাকাবাসী ভুক্তভোগীকে দেখতে পাননি বলে জানান।

বাট্টা গ্রামের সন্ধানদাতা শান্তি খান জানান, আবু মিয়া সুস্থ সবল মানুষ ও সামান্য  জমির মালিক। এই জমির জন্য প্রতিনিয়ত ছেলেরা মারধর ও আঘাত করে থাকেন। তিনি (আবু মিয়া) ছেলেদের ভয়ভীতি দেখান আমার সঙ্গে তোরা (ছেলেরা) এ রকম করছ, আমি জমি-জমা অন্যদের সাফ-কবলা করে দেবো।

তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত ওই বৃদ্ধকে ছেলেরা ১০ বারের অধিক রক্তাক্ত জখম করেছে। গত রমজান মাস থেকে শেকলে বেঁধে তালাবদ্ধ ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে।

চকবাট্টা গ্রামের বুলবুল ভূঁইয়া নামে একজন জানান, আবু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দোকানে যাওয়া আসার সময় বলতেন আমার টাকা-পয়সা নাই। আমার গাছগুলো তোমরা কিনবা। এ কথা প্রায় সময়ই বলতেন। প্রায় তিন মাস যাবৎ তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। আজ (শনিবার) তাকে তালাবদ্ধ ঘরে শেকলে বাধা অবস্থায় দেখতে পেলাম।

ছেলে সেলিম মিয়া বলেন, বাবা চাকরি থেকে ৯৩ সালে অবসর নেন। আমর তিন ভাই ও দুই বোন ছোট। ছোট থেকে দেখছি বাবা মাকে নির্যাতন করেন। আমাদের মা সম্পত্তি বিক্রি করে কষ্ট করে ভাই-বোনদের লেখাপড়া ও বোনদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। বাবা সংসারের খোঁজ-খবরও রাখেন না। টাকা দিলেই অন্যদের দিয়ে দেন। বাবাকে অনেক বুঝিয়েছি তুমি টাকা-পয়সা নিয়ে এ রকম কইরো না। মাসে মাসে আমরা পাঁচশো টাকা করে দিলেও তা বাবার একদিনের খরচও না, এই বলে চিল্লাচিল্লি করে থাকেন। বাবার যদি একটু সুস্থ জ্ঞান থাকতো তাহলে তার সঙ্গে এ রকম করতে হতো না।

বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন (বসাক) উপজেলা শাখার সভাপতি শাহ আলী তৌফিক রিপন জানান, বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় বৃদ্ধকে শেকল বাধা অবস্থায় দেখতে পাই। উদ্ধার কর হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং বৃদ্ধের পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে বৃদ্ধের ভবিষ্যৎ দিনগুলি কীভাবে ভালোভাবে অতিবাহিত করতে পারে ও আইনগত দিকটিও বিবেচনাধীন রয়েছে।

শেকলবন্দী  বৃদ্ধকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে কেন্দুয়া থানার ওসি আলী হোসেন বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। ভুক্তভোগীর স্ত্রী হামেদা আক্তার ও বড় ছেলে সেলিম আটক আছে।