সিওভিআইডি-১৯ (COVID 19) সংক্রমণ রুখতে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ কতটা এগোল সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বিশ্ববাসীর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল টেস্ট হয় এক মহিলার উপরে। সিয়াটেলের কাইসার পারমানেন্ট ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে দুই সন্তানের মা ৪৩ বছরের জেনিফার হ্যালারের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী নতুন ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করেন গবেষকরা। এই ভ্যাকসিন তৈরির নেপথ্যে আছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH)। তাদেরই তত্ত্বাবধানে এই অ্যান্টিভাইরাল-ভ্যাকসিন বানিয়েছে ম্যাসাচুসেটসের বায়োটেকনোলজি সংস্থা মোডার্না (Moderna)। এনআইএইচ আগেই জানিয়েছিল, করোনা রুখতে নতুন এক ধরনের ভ্যাকসিন বানাচ্ছে তারা, যার কাজ হবে ভাইরাল প্রোটিনগুলোকে প্রতিরোধ করা। তার জন্য মেসেঞ্জার আরএনএ বা mRNA সিকুয়েন্সকে কাজে লাগাচ্ছে তারা।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ জানিয়েছে, এই ভ্যাকসিনের নাম এমআরএনএ-১২৭৩ (mRNA-1273)। এই ভ্যাকসিনেরই ক্লিনিকাল ট্রায়াল করা হয়েছে। মোডার্না বায়োটেকনোলজি ফার্মের সঙ্গে এই এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিজ (NIAID)-এর ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের (VRC) বিজ্ঞানীরা। গোটা বিষয়টার তত্ত্বাবধানে ছিল এনআইএইচ। অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মোডার্নার তরফে জানানো হয়েছে, এই ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপ (Phase 1)পার করে ফেলা গেছে। যে ডোজের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে সেটা Phase-1 পরীক্ষায় পাশ করেছে। যদিও এর ট্রায়াল এখনও চলবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এমআরএনএ-টেকনোলজিতে (mRNA Technology) তৈরি এই ভ্যাকসিন ভাইরাল প্রোটিনগুলোকে ধ্বংস করবে
২০১০ সাল থেকে পথ চলা শুরু মোডার্নার। মার্কিন সরকারের ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্ট এজেন্সি (DARPA)-র অনুমোদনপ্রাপ্ত এই সংস্থা জানিয়েছে, মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ (mRNA) সিকুয়েন্সকে কাজে লাগিয়েই এই ভ্যাকসিন বানানো হয়েছে। এমআরএনএ হল শরীরের বার্তাবাহক। কোন কোষে প্রোটিন তৈরি হচ্ছে, কোথায় কী রাসায়নিক বদল হচ্ছে সবকিছুর জিনগত তথ্য বা ‘জেনেটিক কোড’ জোগাড় করে সেটা শরীরের প্রয়োজনীয় জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন বার্তাবাহক এমআরআনএ-কেই ভ্যাকসিন তৈরির ভিত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই ভ্যাকসিনের কাজ হবে শরীরের কোষগুলিকে অ্যান্টি-ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়া। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী বব ল্যাঙ্গার বলেছেন, “বাইরে থেকে প্রোটিন-ড্রাগ ইনজেক্ট না করে, এমএরএনএ ভ্যাকসিন দিয়ে যদি কোষের মধ্যেই ভাইরাস-প্রতিরোধী প্রোটিন তৈরি করা যায় তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বাড়ে।“
একই দাবি হার্ভার্ড স্কুল অব মেডিসিনের ইমিউন-ডিজিজ বিশেষজ্ঞ টিম স্প্রিংগারেরও। তিনি বলেছেন, ‘‘১৮ মাস ধরে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছিল। প্রথমবার মানুষের উপর পরীক্ষা করা হল। এই ভ্যাকসিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে, কোষের মধ্যে অ্যান্টি-ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করবে। ফলে মারণ ভাইরাস আর শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে পারবে না।’’ তবে এই ভ্যাকসিন বাজারে আসতে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে বলেই মনে করছেন তিনি।
কেমন ভাবে কাজ করবে এই এমআরএনএ-ভ্যাকসিন?
ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলছেন, সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনগুলো মানুষের শরীরের বাহক কোষে নিজেদের পছন্দের রিসেপটর খুঁজে নিয়েছে। মনে করা হচ্ছে ভাইরাল প্রোটিনগুলো এই এসিই২ (ACE-2)রিসেপটরের সঙ্গে জোট বেঁধে কোষে প্রবেশ করছে। এই ভ্যাকসিন জোট বাঁধার এই প্রক্রিয়াকে রুখবে। পাশাপাশি, অ্যান্টিজেন তৈরি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করবে।
কেমন ডোজ হবে এই ভ্যাকসিনের
মোডার্নার চিফ মেডিক্যাল অফিসার টাল জ্যাকস বলেছেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে এমআরএনএ-১২৭৩ ড্রাগের তিনটি ডোজ নির্ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা যা মানুষের জন্য একেবারেই সুরক্ষিত। ২৫,১০০, ২৫০ মাইক্রোগ্রামের তিনটি ডোজ দু’টি পর্যায়ে ২৮ দিন অন্তর দেওয়া হবে রোগীদের।’’ প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়াল এভাবেই হয়েছে। দ্বিতীয় ভ্যাকসিনের জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
-সৌজন্যে দি ওয়াল