বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মসজিদের খুতবায় জীবনঘনিষ্ঠ বিষয় তুলে ধরা প্রয়োজন। মানুষের জীবনে কাজে লাগতে পারে এ ধরনের বিষয় খুতবায় প্রাধান্য দিলে জাতি উপকৃত হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ইমামদের কথা মানুষ শোনে। তাদেরকে জনগণ সম্মান করে। কোরআন-হাদীসের আলোকে সমসাময়িক বিষয়গুলো উপস্থাপন করলে মানুষ সেটা লুফে নেবে। তিনি খুতবায় মুখরোচক ইতিহাস, ভিত্তিহীন ও বাস্তবতাবিবর্জিত কথাবার্তা পরিহার করার অনুরোধ জানান। এছাড়া, তিনি ইমামদেরকে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আয়বর্ধক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি বুধবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘হাওর এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে ইমামদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব এ কথা বলেন। সেমিনারে উপদেষ্টা হাওর এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে ইমামদের করণীয়সহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।
বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: রেজাউল করিম, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ মুশফেকুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক বজলুর রশীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদার। বক্তব্য রাখেন দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূর, জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা এহসান উদ্দিন, জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব। সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তা, ইমাম, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আরো বলেন, ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ইমামরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছেন। দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে ইমামদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। জীববৈচিত্র সংরক্ষণে ইমামদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। তারা হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রণীত প্রাক-খুতবাকে চমৎকার অভিহিত করে ড. খালিদ বলেন, এ খুতবায় জীবনধর্মী ও সমসাময়িক বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এতে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ খুতবা অনুসরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় যুক্ত করার জন্য ইমামদেরকে অনুরোধ জানান। এছাড়া, তিনি জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, বনায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ প্রভৃতি বিষয়ে আলেম-ওলামাদেরকে সোচ্চার ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন।
সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রমজান মাসে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমে যায়। আর বাংলাদেশে সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়। নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বাজারে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে সরকার। এ সময় নিত্যপণ্যের দাম রমজান মাসে সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের আওতায় হাওর এলাকার ২৫ হাজার ৮৭০ জন ইমাম, আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাতটি জেলার ৫৭টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।