বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ঠাকুরগাঁওয়ে ভারী শিল্প কারখানার বদলে কৃষিকাজের প্রাধান্য বেশি। বিভিন্ন উপজেলায় এখন গমের চাষাবাদ হচ্ছে। গেল বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছরও অনেক কৃষক গম চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, এ বছর মাঠে মাঠে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ।
কৃষিকাজ এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। তবে এতে অনেকের ভাগ্য বদলায়নি। অভাব অনটন যেন নিত্যসঙ্গী তাদের। এবার বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় কৃষক খুশি। সাধারণত মৌসুমের শুরুতে ধান ও গমের দাম তুলনামূলক কম থাকে। কৃষকের গোলায় ধান না থাকায় তখন বাড়ে এর দাম। সঙ্গে গমের দামও। এভাবে দর ওঠানামার ফলে কৃষক কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন, অনেক কৃষক।
ঠাকুরগাঁওয়ে এবার অত্যধিক শীতের কারণে গমের আবাদ ভালো হয়েছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে গমের বাম্পার ফলন হয়।
ঠাকুরগাঁওর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এবারের মৌসুমে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চলতি বছর এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। রানীশংকৈল উপজেলায় গম আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। পীরগঞ্জ উপজেলায় গম আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। আর হরিপুর উপজেলায় পাঁচ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁয়ের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন জাতের গম যেমন বারি গম ২৫, ২৮, ৩০, ও ৩৩ জাতের গম চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। তাছাড়া গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনেক জমিতে গম আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের উপযুক্ত পরামর্শ-দিকনির্দেশনা ও কৃষকদের সঠিক পরিচর্যার কারণে গোটা জেলায় গমের ফলন আশাব্যঞ্জক।
সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. সোলায়মান আলী জানান, এবার পাঁচ একর জমিতে গম আবাদ করছি। গেল বছরের মতো এবারও ভালো ফলন আশা করছি। কিন্তু গমের চাষাবাদে খরচ বেশি, পরিশ্রম কম। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ও গমের দাম ভালো হলে এ ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আমিরুল ইসলাম জানান, এবার তিন একর জমিতে ৩৩ বারি গমের জাত রোপণ করেছি। আমরা কৃষিকাজ ছাড়া অন্যকিছুর সঙ্গে জড়িত নই। অন্যকিছু পারিও না। তবে আমাদের দিকে কেউ সুনজর দেয় না। আমরা যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপন্ন করি, সবসময় পাই না এর দাম। পাই না সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা। বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, ইরি ও বোরো ধানের আবাদ কমিয়ে এ বছর কিছু জমিতে গম চাষ করেছি। এ ফসলে একবার নিড়ানি ও একবার সেচ দিলেই চলে। একই সঙ্গে কোনো বড় ধরনের ঝড় ও শিলাবৃষ্টি না আসে তাহলে ভালো ফলন হয়। আশা করি এ বছর লাভবান হব। সদর উপজেলার মোহাপুর ইউনিয়নের হরিণারায়ন পুর মাসটার পাড়া গ্রামের কৃষক তাজু জানান, গম চাষাবাদ খুব সহজ ও স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক ফসল। তিনি এ বছর ১৫ একর জমিতে নতুন জাতের ৩৩ বারি গমের জাত রোপণ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হবে বলে তিনি আশা করছেন।
কৃষকরা জানান এক বিঘা জমিতে গম চাষে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৪৫ মণ গম উৎপাদন হয়। গত বছরের মতো এ বছর গমের দাম মণ প্রতি এক হাজার টাকা হলে বিঘা প্রতি লাভ হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন জানান, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ কারণে এবার গমের ফলন বাম্পার হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের অনুকূলে থাকলেও দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছর লাভের মুখ দেখেন না কৃষক।
–শামসুলআলম