বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
গরুরা নির্বোধ কে বলেছে! এবার থেকে বোকাসোকা বোঝাতে গরু বলার আগে ভেবে দেখবেন।
গরুরাও যথেষ্ট চালাকচতুর। সঠিক ট্রেনিং পেলে বড়সড় কাণ্ডও ঘটিয়ে ফেলতে পারে। গল্পের গরু নয় কিন্তু, বাস্তবের গরুরাই এবার থেকে ‘ওয়েল ট্রেনড’ হয়ে উঠবে। মাঠেঘাটে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করবে না। কাজ সারবে বাথরুমে গিয়েই। নোংরা বাথরুম পরিষ্কারও করবে। ফ্লাশ টেনে সাফসুতরো করে তবেই বেরবে।
নিউজিল্যান্ড ও জার্মান বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা খামারের পশুদের ট্রেনিং দেওয়া। গরুদের বাথরুমে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে বেশ উঠেপড়েই লেগেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘কারেন্ট বায়োলজি’ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। শীর্ষ বিজ্ঞানী জ্যান ল্যাংবেইন বলেছেন, গরুদের বা খামারের গবাদি পশুদের এই অভ্যাস করাতে পারলে খোলা জায়গায় যেখানে সেখানে মূলমূত্র জমবে না। এর সুবিধা দুটো—এক, গরুর মলমূত্রের নাইট্রোজেন পরিবেশে প্রভাব ফেলবে না, দুই, নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ গোবর জমিয়ে রেখে বায়োগ্যাস তৈরি করা অনেক সহজসাধ্য হবে।
বিজ্ঞানী লিন্ডসে ম্যাথিউ বলেছেন, ২০০৭ সালেই খামারের পশুদের নিয়ে এমন একটা কিছু করবেন বলে ভেবেছিলেন গবেষকরা। কিন্তু গোটা বিষয়টাই তখন হাসি-কৌতুক করে চাপা পড়ে গিয়েছিল। এখন পরিবেশ দূষণ চরমে, বিশ্ব উষ্ণায়ণ খাঁড়া ঝুলিয়ে রেখেছে। পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু বদলের জন্য দায়ী করা হয় গ্রিন হাউজ গ্যাসকে। যার মধ্যে একটি নাইট্রাস অক্সাইড, যা গরুর গোবরের নাইট্রোজেন ভেঙে বাতাসে মিশে তৈরি হয়। তাই এখন বিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতেই হচ্ছে।
হঠাৎ করে গরুদের নিয়ে এত মাথাব্যথা করছেন কেন বিজ্ঞানীরা? তার কারণ আছে। প্রথমত, ওই গ্রিন হাউজ গ্যাস নাইট্রাস অক্সাইড। গবাদি পশুর মাটিতে মেশা মল, মূত্র থেকে তৈরি হওয়া অ্যামোনিয়াকে ব্যাক্টরিয়া-সহ কয়েকটি অণুজীব বদলে দেয় নাইট্রাস অক্সাইডে। যা কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের পর তৃতীয় বিপজ্জনক গ্রিনহাউস গ্যাস। চাষবাস থেকেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অ্যামোনিয়া গ্যাসের নির্গমন হয়। যার অর্ধেকের জন্যই দায়ী গবাদি পশুদের মল ও মূত্র।
দ্বিতীয়ত, গরুর অন্ত্রে এমন কিছু জীবাণুর উপস্থিতি যার ক্রিয়ায় খাদ্যবিয়োজনের পর পায়ুপথে যে বায়ু নিঃসরণ হয় (এবং উদ্গারে) তা মিথেন গ্যাসে ভরপুর। উষ্ণায়নে যার ক্ষতিকর ভূমিকা কার্বন ডাইঅক্সাইডের থেকে অন্তত কুড়ি গুণ বেশি। দেশের অর্থনীতিতে গবাদি পশুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার উষ্ণায়ন এবং পরিবেশ দূষণও বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সবদিকই ভেবে দেখতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের।
অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ডগলাস এলিফি বলেছেন, মানবশিশুর মতোই খামারে প্রতিপালিত গবাদি পশুরা খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে। গরুদেরও ট্রেনিং দিয়ে দেখা গেছে, তারা নাকি যথেষ্টি বাধ্য। বাথরুমের দরজা ঠেলে ঢোকে, আবার কাজ সারার পরে মনে ফ্লাশটাও করে। গরুর বুদ্ধির তারিফ না করে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।