*হাসিলের টাকা তুলতে পারি নাই
*বাজার মূল্য ৩৫ কোটি
*করোনার জেরে হাটবিমুখী ছিলেন ক্রেতারা
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: আশা ছিল শেষ মুহুর্তে বেচাকেনার ধুম পড়ে যাবে কোরবানি পশুর হাটে। কিন্তু বেচাকেনা একটুও জমেনি। রয়ে গেছে প্রায় ৩৩ হাজার কোরবানি যোগ্য গরু। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৫ কোটি হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাগরিকা গরুর বাজার, নূরনগর হাউজিং ( এক কিলোমিটার গরুর বাজার), সল্টগোলা ক্রসিং পশুর হাট, পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে গরুর হাট, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন বাজারে অবশিষ্ট আছে আরও ৯ হাজার গরু। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ২৪ হাজার গরু অবিক্রীত থাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে বিক্রি হয়নি ২ হাজার ৭০০ কোরবানি যোগ্য ছাগল।
চট্টগ্রামে আসা ব্যাপারীরা বলছেন, যশোর, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, খুলনা, বাগের হাটসহ দূর-দুরান্ত থেকে গরু নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিলেন ভালো বিক্রির আশা নিয়ে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জেরে এবারে বড় অঙ্কের লোকসান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন হাটের ইজারাদাররা। পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে গরুর হাটের ইজাদার ওয়াহিদ চৌধুরী জানান, ইদের ২ দিন আগে থেকেই ট্রাক ভর্তি গরু নিয়ে অন্য হাটে কিংবা বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন অনেক গরু ব্যবসায়ী। আনুমানিক ৬০ ট্রাক গরু এ হাট থেকে অবিক্রিত নিয়ে গেছেন বেপারীরা। লাভের আশায় হাটের ইজারা নিয়েছিলাম আমরা। শেষ পর্যন্ত ২ লাখ টাকার গরু ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। হাসিলের টাকা তুলতে পারি নাই।
পাবনা থেকে ১৩টি গরু নিয়ে ১৩ জুলাই সাগরিকা গরু হাটে এসেছিলেন বসিরুল মিয়া। প্রথম দিন একটি এবং পরের দিন আরও ৭টি গরু বিক্রি করেছেন মোটামুটি ভালো দামেই। বাকি ৫টি বড় গরু শেষ সময়ে চড়া দরে বেচবেন এমন আশায় সেগুলোর ভালো দাম উঠলেও তখন বিক্রি করেননি। এবার বড় গরুর আর তেমন ক্রেতার দেখা মেলেনি। দু’চারজন ক্রেতা দরাদরি করলেও সবাই অস্বাভাবিক কম দাম বলেছেন। এখন ট্রাক ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচের যোগ-বিয়োগ করে লস দিয়ে হলেও বিক্রি করে চলে যেতে চান বসিরুল মিয়া। শুধু তিনি নন এরকম দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ৩৫ হাজার গরু অবিক্রিত আছে। তিনি আরও বলেন, সারা বছরই গরুর চাহিদা থাকে। তাই গরুগুলো বছরের অন্যন্য সময় বিক্রি হবে।
হাটে আসা প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, চট্টগ্রামে এবার অলিগলিতে ছোট ছোট হাট (খাইন) বসিয়েছে অনেকেই। যার ফলে বিভিন্ন পাড়া মহল্লার গরুর চাহিদা সেখান থেকেই মিটেছে। সবমিলিয়ে করোনার জেরে হাটবিমুখী ছিলেন ক্রেতারা।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) চাহিদা ৮ লাখ ৯ হাজার। যার বিপরীতে আনোয়ারা, সাতকানিয়া, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলা মিলে চট্টগ্রাম জেলায় স্থানীয়ভাব গরু পালন করা হয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। কিন্তু সব শেষ তথ্য ( ২০ জুলাই রাত ৮টা) অনুযায়ী, চট্টগ্রামে প্রায় ৭ লাখ ৬৫ হাজার কোরবানি যোগ্য পশু বিক্রি হয়েছে।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের গত ৫ বছরে চট্টগ্রাম জেলার বছর ওয়ারী পশু জবাই ও উৎপাদনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি পশু। ২০১৬ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১১৯টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫২টি। ২০১৭ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি।
২০১৮ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার। ২০১৯ সালে স্থানীয় উৎপাদন ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি। যার বিপরীতে জবাই হয়েছে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৯টি। সবশেষ ২০২০ সালে স্থানীয় উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি।