বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
তালিবান কাবুলে ঢোকার আগেই জানা গিয়েছিল, তাদের প্রতিনিধিরা চিনা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। শুক্রবার জঙ্গি সংগঠনের তরফে খোলাখুলি জানানো হল, বেজিং তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তারা আশা করে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা নেবে চিন। বিনিময়ে তারা আফগানিস্তানের তামার খনি থেকে তামা উত্তোলন করবে।
তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ বলেন, তাঁরা চিনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্প সমর্থন করেন। ওই প্রকল্পে চিনের সঙ্গে আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপকে যুক্ত করা হবে। সেজন্য নির্মাণ করা হবে একাধিক রাজপথ, রেলপথ, বন্দর ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।
জিও নিউজকে সাক্ষাৎকারে জাবিউল্লা মুজাহিদ বলেন, “চিন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে তৈরি। তারা আমাদের দেশের পুনর্গঠনে সাহায্য করবে।” তিনি পরে বলেন, “আমাদের দেশে তামার সমৃদ্ধ খনি রয়েছে। চিন সেখানে কাজ করবে। খনিগুলির আধুনিকীকরণ করবে। চিনের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বের বাজারে পৌঁছতে পারব।”
চিন ইতিমধ্যে তালিবান সম্পর্কে আশা প্রকাশ করে বলেছে, তারা আর আগের মতো কট্টরপন্থায় বিশ্বাসী নয়। আগামী দিনে তারা সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলির মোকাবিলা করবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখবে। দেশের জনতা তথা আন্তর্জাতিক মহলের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।
মঙ্গলবার চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, “আমাদের দেশ আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। আমরা আফগান জনগণের বন্ধু হতে চাই।” জাবিউল্লা মুজাহিদ জানিয়েছেন, তালিবান রাশিয়াকেও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে মনে করে।
শুক্রবার জানা যায়, খুব শীঘ্রই আফগানিস্তানে নতুন সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করবে তালিবান। তার শীর্ষে থাকবেন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বরাদর। মোল্লা বরাদর বাদে নতুন সরকারে থাকবেন তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুব এবং অপর শীর্ষস্থানীয় নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তালিবান সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের প্রত্যেক শীর্ষ নেতা কাবুলে উপস্থিত হয়েছেন। শীঘ্রই নতুন সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করা হবে।
গত ২১ অগাস্ট কাবুলে আসেন মোল্লা বরাদর। তখন থেকেই নানা সূত্রে শোনা যায়, তিনি নতুন আফগান সরকারের শীর্ষে থাকবেন। তাঁকে আগে আফগানিস্তানের বাইরে বেশি লোক চিনতেন না। কিন্তু আচমকা তিনি চলে এসেছেন সংবাদ শীর্ষে। পাশ্চাত্যের সংবাদপত্রগুলি বলছে, আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধে কেউ যদি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়ে থাকেন, তিনি হলেন মোল্লা বরাদর।
তালিবানের সংগঠন মূলত পাশতুন জাতির লোকজনকে নিয়ে গঠিত। মোল্লা বরাদরও সেই জাতির মানুষ। তিনি পোপালজাই উপজাতির সদস্য। আফগানিস্তানের আর এক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও ওই উপজাতির সদস্য ছিলেন। ইন্টারপোল জানিয়েছে, ১৯৬৮ সালে উরুজগান প্রদেশের দেহরাউদ জেলায় উইতমাক গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। একসময় তিনি গ্রামে ছাগল চরাতেন। আটের দশকে সোভিয়েত সেনার বিরুদ্ধে তথাকথিত জেহাদে যোগ দেন।