সালেহ নোমান
চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান প্রবেশ দ্বার চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তীব্র নজরদারি চলছে যাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
চীন থেকে আসা প্রতিটি জাহাজের নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে গভীর সমুদ্রে। তাছাড়া, ওইসব জাহাজের নাবিকদের ‘অন-এরাইভাল’ ভিসা দেয়া বন্ধ রয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তে। চীন হয়ে আসা জাহাজগুলোর নাবিকদের রাখা হয় বিশেষ পর্যবেক্ষণে। চীনা বন্দর থেকে ছেড়ে আসার ২১ দিনের মধ্যে কোন জাহাজের পণ্য খালাস হবে না বলে বৃহস্পতিবার বন্দরের বার্থিং সভায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় এক হাজার বিদেশি নাবিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে, কোন সার্কুলার দেয়া হয়নি।
দেশের আমদানি বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় চীনের সাথে সমুদ্র পথে। সেই কারণে কারোনাভাইরাস সতর্কতায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে। চীন হয়ে আসা জাহাজগুলোর নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় দেশের সীমানায় প্রবেশ করার সাথে সাথে অর্থাৎ গভীর সমুদ্রে।
করোনাভাইরাস সতর্কতায় চট্টগ্রামে যে সাতটি বিশেষ মেডিকেল টিম প্রস্তুত, তার দুটিকে রাখা হয়েছে গভীর সমুদ্রে গিয়ে জাহাজের নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। এছাড়া, বন্দরের ইমিগ্রেশন পয়েন্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে সব নাবিককে। সেখানে আছে আরো দুটি মেডিকেল টিম।
বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিনই মেডিকেল টিম উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে জাহাজে যান নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদেশি জাহাজের মোট এক হাজরের মত নাবিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কারো শরীরে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত চীন থেকে জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। প্রতিদিন না হলেও এক দিন পরপর চীনা বন্দর থেকে চট্টগ্রামে জাহাজ আসে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে এই রকম ৫/৬টি জাহাজ এসেছে।
জাহাজের নাবিকদের তিন স্তরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রথমে জাহাজের চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করেন। এরপর তীর থেকে স্থানীয় মেডিকেল টিম তাদের পরীক্ষা করে। সর্বশেষ বন্দরে আসার পর তাদের আবারো পরীক্ষা করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারিশ জানিয়েছেন, চীন হয়ে যেসব জাহাজ বাংলাদেশে আসছে সেই সব জাহাজের নাবিকদের নিজ নিজ জাহাজে অবস্থানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তাদের জাহাজের বাইরে আসার অনুমতি দেয়া হচ্ছেনা। তাছাড়া তারা নিজ থেকেই জাহাজের বাইরে আসছেন না।
বন্দর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেকগুলো বড় প্রকল্পে চীনের নাগরিকরা কাজ করছে। সেই কারণে বাড়তি সতর্কতা চট্টগ্রামের সবগুলো প্রবেশ পথে। শাহ আমানত বিমান বন্দরে নিয়োজিত রয়েছে তিনটি মেডিকেল টিম।
বিদেশি ফ্লাইটের প্রত্যেক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় বলে জানালেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এবিএম সারওয়ার জাহান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে পাঁচ শয্যার এবং ফৌজদারহাট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে দশ শয্যার বিশেষ ইউনিট রাখা হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগিদের জন্য।
বন্দর ও হাসপাতালগুলোতে রাখা হয়েছে সংক্রামক ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ পোষাক পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইউনিট পিপিই।
এছাড়া টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেই জন্যও রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।