বগুড়া: ফুলগাছ খাওয়ার অপরাধে ছাগলকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে আলোচনায় উঠে আসা সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিনকে বগুড়ার আদমদীঘি থেকে বদলি করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বদলির আদেশের একটি চিঠি মঙ্গলবার তার কাছে পাঠানো হয়েছে। বগুড়ার জেলা প্রশসাক জিয়াউল হক বুধবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়ার জেলা প্রশসাক বলেন, ‘ইউএনওকে স্থানীয় সরকার বিভাগে বদলি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মঙ্গলবার এসেছে। এটা নিয়মিত বদলি বলা যায়।’
যা ঘটেছিল: গত ১৭ মে উপজেলা পরিষদের ফুলগাছ খেয়ে ফেলেছিল সাহারা বেগমের ছাগল। এ জন্য ছাগলটিকে আটক করে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউএনও।
ছাগলের মালিক তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পশুর পক্ষে তো জরিমানা দেয়া সম্ভব নয়। তাই মালিককে চাপ দিতে আটক করা হয় সেই ছাগল।
সীমা শারমিন জানান, উপজেলা চত্বরে একটি পার্ক করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুলের গাছ নিয়ে এসে লাগানো হয়েছে। কিন্তু এখানে ওই ছাগল এসে গাছের ফুলগুলো খেয়ে নিয়েছে কয়েকবার। এ বিষয়ে ছাগলের মালিককে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে গণ-উপদ্রব আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ছাগলমালিক যা বলছেন: সাহারা আদমদীঘি উপজেলা পরিষদ চত্বরের ডাকবাংলোসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম জিল্লুর রহমান।
ছাগলটি হারিয়ে তিনি অনেক জায়গায় সন্ধান করেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে জানান, ছাগলটি ইউএনওর এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছে রয়েছে।
তিনি ইউএনওর বাসার পাশে গিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে দেখেন। এ সময় ছাগল ফেরত চাইলে দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন ওই নিরাপত্তাকর্মী।
পরে তিনি ইউএনওর কাছে গেলে তিনি তাকে বলেন, ‘ফুলগাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যান।’
কিন্তু ছাগল ফুলগাছ খাবে- এ জন্য দুই হাজার টাকা দিতে হবে, এটা মানতেই পারেননি সাহারা বেগম। টাকা দিচ্ছিলেন না তিনি।
এর মধ্যে ইউএনওর গৃহকর্মী হঠাৎ তাকে ডাকেন টাকা নিয়ে আসতে। তখন আক্কেলগুড়ুম দশা সাহারা বেগমের। কেন তাকে টাকা দেবেন? সেই গৃহকর্মীর কাছেও তিনি রাখেন প্রশ্ন।
পরে তাকে জানানো হয়, ২২ মে তার ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বেচে দেয়া হয়েছে। এ থেকে জরিমানা বাবদ দুই হাজার টাকা কেটে রাখা হয়েছে। বাকি টাকা যেন নিয়ে আসেন। তবে সাহারা বেগম সেই টাকা আর দেননি।
ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ছাগলকে যে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন, তাতে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজ্জাম্মেল হক।
ছাগলের মালিকের অনুপস্থিতিতে এভাবে জরিমানা করা যায় কি না, জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজ্জাম্মেল হক বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইনমতে, অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ স্বীকার করতে হবে। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান বা সম্পদের (ছাগল) মালিকের বিরুদ্ধে এভাবে জরিমানা করা ঠিক হয়নি। এই ঘটনায় প্রচলিত বৈধ রীতি খোঁয়াড়ে ছাগল রাখতে পারতেন। অথবা বেশি ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থানায় কিংবা আদালতে মামলা করতে পারেন।
এ নিয়ে ২৬ মে সংবাদ প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। পরদিন সন্ধ্যায় ডাক পড়ে মালিক সাহারার। ছাগলটি তুলে দেয়া হয় তার হাতে।
তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান, স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ওই নারীকে ছাগল ফেরত দেয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা আমি দিয়েছি। তাকে সংশোধনের জন্য জরিমানা করেছিলাম, শাস্তি দেয়ার জন্য নয়।’
আর সেই নারী ছাগল বিক্রি করে দেয়ার যে অভিযোগ করেছেন, সেটি সত্য নয় বলে দাবি করেন ইউএনও। বলেন, ছাগলটি একজনের জিম্মায় দেয়া হয়েছিল।-শেয়ার নিউজ