বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: বন্দর নগরীতে টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র খাতুনগঞ্জ। বৃষ্টিতে আমিন মার্কেট, হামিদুল্লাহ মার্কেট, পোড়াভিটা, চালপট্টি, শুঁটকিপট্টি, আছাদগঞ্জসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে।
বর্ষায় আরো খারাপ অবস্থা হওয়ার আশংকা করছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ। তিনি বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি যেন পিছুই ছাড়ছে না। একদিকে করোনার প্রভাব, তার উপর বর্ষা মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানির কারণে গুদাম ও দোকানপাটগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। গতকাল মাত্র ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই নগরীর যে অবস্থা, সামনে কি হবে তা অনুমেয়।
কয়েক দিন আগেই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সিডিএর চেয়ারম্যান বরাবর আমরা চিঠি দিয়েছি। কর্ণফুলী নদী নিয়ম মাফিক ড্রেজিং ও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে মেগাপ্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করলেই জোয়ারের পানি থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাশাপাশি নগরবাসীকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি মেয়রের ক্ষমতা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। এখন মেয়রের কথা কেউ শুনেনা। সমন্বয়হীনতার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সফলতা নগরবাসি পাচ্ছে না। ডোর টু ডোর ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে। এখন এক সংস্থা অন্য সংস্থাকে দোষ না দিয়ে প্রথমে মূল সমস্যা থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজে বাঁধ দেওয়ার কারণে অনেক জায়গায় পানি জমে যাচ্ছে। এখন সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএ-কে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে, র্যাপিড রেসপন্স টিম করতে হবে, যে জায়গায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে সে জায়গায় বাঁধ কেটে দিয়ে পানি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে আড়াই থেকে তিন হাজারের মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও গুদাম রয়েছে। শুধু পেঁয়াজ, রসুন, হলুদসহ কাঁচামালের আড়ত রয়েছে দেড় শতাধিক। অধিকাংশ আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকে যাওয়ায় পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া চাল, ডাল, চা পাতা, শুঁটকি, মশলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড। এই প্রকল্পের আওতায় খালগুলোর মুখে স্লুইচগেট ও প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। এ জন্য খালের ভেতরের বিভিন্ন অংশে অস্থায়ীভাবে বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
তিন বছর মেয়াদি মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও বাস্তবে এর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হলেও সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। পরে প্রকল্পটি আরও তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৫১ শতাংশ।
উল্লেখ্য, মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল আরএস শিট অনুযায়ী পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, খালের উভয় পাশে ১৫ ফুট চওড়া রোড ও খালের মুখে ৫টি স্লুইস গেইট বসানো, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ (বালি জমার স্থান), ৩টি জলাধার নির্মাণ, ৩৬টি খাল খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন, ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ, নতুন করে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কথা রয়েছে।