Home First Lead ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড দক্ষিণ উপকূল

ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড দক্ষিণ উপকূল

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে  লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সুন্দরবনসহ দক্ষিণ উপকূল। সাতক্ষীরায় গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বহু আধা পাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত।ঝড়ের তীব্রতা এতটাই শক্তিশালী ছিল বহু বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে ।  ফলে অনেক এলাকা এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন।

কমপক্ষে ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এদের মধ্যে যশোরের চৌগাছায় ২, পটুয়াখালীতে ২, ভোলায় ২, বরগুনায় ১, সাতক্ষীরায় ১, সন্দ্বীপে ১ ও পিরোজপুরে একজন। অনেকে মারা গেছেন গাছ চাপা পড়ে। ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বিদ্যুৎ লাইন। দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কয়েক ফুট বেড়েছে নদনদীর পানি।হুমকির মুখে রয়েছে বেড়িবাধ। ফলে বাধ ভাঙার আতংকে রয়েছেন উপকুলবাসী।

পটুয়াখালীতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে গলাচিপা উপজেলায় রাসেদ (৬) নামে এক শিশু ও কলাপাড়ায় শাহ আলম নামে সিপিপি’র এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে মো. শাহ আলম মীর (৫৫) নামে একজন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে খেয়া পার হওয়ার সময় পানিতে পড়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরে সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

চরফ্যাশন উপজেলায় সিদ্দিক ফকির (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এছাড়া এক নারী গুরুতর জখম হয়েছেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছুপিয়া এলাকার রেইনট্রি গাছ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে সিদ্দিক ফকির জখম হয়। তাকে তাৎক্ষণিক চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।

চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ইয়ানুর বেগমের (৩০) গায়ে সুপারি গাছ ভেঙ্গে মাথায় আঘাত লাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার মাথায় প্রায় ২৫/২৬টি সেলাই লেগেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

ভোলায় রামদাসপুর চ্যানেল ৩০ যাত্রীসহ একটি ট্রলার ডুবে একজন নিহত হয়েছে। ট্রলার ডুবিতে নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম এলাকায়। ওই ব্যক্তিসহ ৩০ যাত্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসেন। তারা লক্ষ্মীপুর জেলার মজু চৌধুরী ঘাট থেকে ট্রলার যোগে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ভোলায় আসে। ওই ট্রলার রাজাপুর সুলতানীঘাটের কাছে এলে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় স্রোতের টানে ভেসে যান রফিকুল ইসলাম। পরে তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় বুধবার রাত ৮টার পর দ্বিতীয়বার ১৪৮ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছে এ জেলায়। প্রবল বর্ষণে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নয় গ্রাম। এ ছাড়া ১৩টি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ঝড়ের আঘাতে সাতক্ষীরা সদর থানার কামালনগরে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ির। ভেঙেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই জেলাটি।

সন্দ্বীপ: বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সন্দ্বীপ পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ডে জোয়ারে ভেসে যাওয়া এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। নিহত যুবকের নাম মো. সালাউদ্দিন (১৮)। তিনি পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডের হোনাজীর বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে। জানা গেছে, চরে গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় সালাউদ্দিন।
পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দেওয়া ধসে শাহজাহান মোল্যা (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর ও চাকলায় বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। অপরদিকে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখান বাজার এলাকায় জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শহীদ (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

যশোরের চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চৌগাছার চানপুর গ্রামের পিন্টু মিয়া জানান, তার প্রতিবেশী মৃত ওয়াজেদ হোসেনের বাড়িতে ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৬) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩) গাছচাপা পড়ে মারা গেছে।