শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু টানেল
গাড়ির গতি ৮০ কিলোমিটার ধরে এই টানেল তৈরি। অনায়াসে তা তিন মিনিটে পাড়ি দেওয়া যাবে। ২২ টনের বেশি ওজনের যানবাহনও টানেল দিয়ে চলাচল করতে পারবে। আর ৯ মাত্রার ভূমিকম্পসহনীয় করে টানেল তৈরি করা হয়েছে।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: টানেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। আগামীকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুয়ার খুলছে। দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ এটা ।এই নিয়ে চট্টগ্রাম জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
শনিবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম এই সুড়ঙ্গপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর টানেল পাড়ি দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারায় গিয়ে কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশীদ জানান, ‘গাড়ির গতি ৮০ কিলোমিটার ধরে এই টানেল তৈরি। অনায়াসে তা তিন মিনিটে পাড়ি দেওয়া যাবে। ২২ টনের বেশি ওজনের যানবাহনও টানেল দিয়ে চলাচল করতে পারবে। আর ৯ মাত্রার ভূমিকম্পসহনীয় করে টানেল তৈরি করা হয়েছে।’
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিকভাবে চট্টগ্রাম মহানগরীর গুরুত্ব ও পরিধি ব্যাপক হলেও নগরী কেবল কর্ণফুলীর এক প্রান্তেই বিস্তৃত হয়েছে। নদীর ওপারের আনোয়ারায় বাণিজ্যসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি না হওয়ায় সেদিকটা থেকে গেছে অবহেলিত। টানেল চালুর পর বন্দরনগরীর পরিধি বাড়বে। ফলে, ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়বে।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান হবে পতেঙ্গা প্রান্তে। এরপর আনোয়ারা প্রান্তে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে একটি জনসভা হবে। টানেলের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। কর্ণফুলী নদীর উভয় পাশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চীনের সাংহাই শহরের ন্যায় চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি অ্যান্ড টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
টানেলের সার্বিক দিক তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পের এলাইনমেন্ট পতেঙ্গা প্রান্ত, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হতে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটিতে। আর টানেলের আনোয়ারা প্রান্ত আনোয়ারা উপজেলার কাফকো সার কারখানার নিকটে। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। দুই টিউব বিশিষ্ট চার লেনের টানেল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। ব্রিজ-ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৭২৭ মিটার (আনোয়ারা প্রান্তে), অ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার, টোল প্লাজার দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ৬০০ বর্গমিটার, আন্ডার পাস ৬টি (আনোয়ারা প্রান্তে পাঁচটি এবং পতেঙ্গা প্রান্তে একটি), কালভার্ট ১২টি, সার্ভিস এরিয়ার ৩০টি বাংলো, একটি ভিআইপি বাংলোসহ মোটেল মেস, হেলনা সেন্টার, কনভেনশন সেন্টার, জাদুঘর, সুইমিংপুল, ব্রিজ, মসজিদ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা রয়েছে।
কোন গাড়ির টোল কত: টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে প্রাইভেট কার, জিপ ও পিকআপের জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। ৩১ বা তার চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ৫ টনের ট্রাক ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাক ৬০০ টাকা, ট্রাক (তিন এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রেইলর (চার এক্সেল) ১ হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলরের জন্য ১ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা বাড়তি টোল দিতে হবে। টানেলের দুই টিউবের চার লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এতে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে ৩ থেকে ৪ মিনিট সময় লাগবে।