বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: অবশেষে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিক সেক্রেটারি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ নিজেই এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনার পতনের পর টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরন নানা খবর প্রকাশ পায় । তারপরও দীর্ঘ সময় তা অস্বীকার করে মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকেন টিউলিপ। তার পদত্যাগ দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা, বিরোধী কনজার্ভেটিভ দলের কিছু এমপি। সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকেন ।
গত আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর শেখ হাসিনা সরকার আমলে বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম আসে। ওই অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এই তৎপরতা আলোচনায় আসার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার মস্কো সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সময় টিউলিপ সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর ওই ছবি এ সময় ফলাও করে প্রচার করে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত খবর, সম্পাদকীয় প্রকাশিত হতে থাকে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সম্পত্তি টিউলিপের ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।এ সব রিপোর্টে টিউলিপের খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হিসেবে আখ্যায়িত করে। এমন বিতর্ক এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি যখন টিউলিপের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তখন বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার পদত্যাগের খবর দেয় বিবিসি। ওদিকে বর্তমান পার্লামেন্টের পুরো মেয়াদে চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে প্রথমবার এমপিদের মুখোমুখি হতে হয়েছে চ্যান্সেলর র্যাাচেল রিভস।
এই প্রেক্ষাপটে টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লিখেছিলেন। মন্ত্রীদের আচার-আচরণ, নীতিনৈতিকতা বিষয়ে ম্যাগনাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে থাকেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। এছাড়া নিজের সকল আর্থিক বিষয়াবলীর ব্যাপারে তদন্তকারীকে তথ্য দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি।
তিনি মন্ত্রী থাকলে সরকার তার কাজে মনযোগ দিতে পারবে না এমন কথা উল্লেখ করে টিউলিপ বলেছেন, “এ কারণে আমি আমার মন্ত্রির পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, পেনসনমন্ত্রী এমা রেনল্ডস টিউলিপের স্থলাভিষিক্ত হবেন।