- অনলাইনে বিক্রির উদ্যোগ নিতে বলেছি: মান্নান
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: থান কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা বিক্রির বৃহত্তম মার্কেট টেরিবাজারে ব্যবসা কমে গেছে অস্বাভাবিক। করোনার ধাক্কায় মার্কেটের অন্ততঃ ২০ শতাংশ ব্যবসায়ীর অবস্থা একেবারে সংকটাপন্ন।
এই তথ্য জানিয়েছেন টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান।
টেরিবাজারে ছোট-বড় ১০০ মার্কেট। প্রায় দু’হাজার দোকান। ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কাপড় আমদানি করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। থান কাপড়, থ্রি পিস, শাড়ি, লুঙ্গি ইত্যাদির পাইকারি ও খুচরা বাজার। তাছাড়া, বিয়ের বাজারের জন্য জনপ্রিয়তার র্শীর্ষে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে কাপড় কিনে নিয়ে যান। লকডাউনের আগে পর্যন্ত টেরিবাজারে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। লকডাউন পরবর্তীতে তা একেবারে সীমিত পর্যায়ে নেমে এসেছে।
বিভিন্ন মার্কেটের দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সব ব্যবসায়ীর কাছে পড়ে রয়েছে কাপড়ের স্তূপ। বিক্রি একেবারে কম। পাইকারি ক্রেতা থাকলেও খুচরা কম। করোনা পূর্ববর্তী অবস্থার তুলনায় ৪০ শতাংশও বিক্রি হয় না।ে
দোকানগুলোতে এখন আশানুরূপ বেচাবিক্রি নেই। দোকানে দোকানে কাপড় মজুত থাকলেও কাংখিত ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
এখানে কথা হয় চকবাজার থেকে কাপড় কিনতে আসা নোমান নুরের সাথে। জানান, অনলাইনে বিক্রির জন্য কিছু শাড়ি কিনতে এসেছি। কিন্তু নতুন ডিজাইনের কাপড় তেমন একটা নেই। পুরনো ডিজাইনের কাপড় কিনতে হচ্ছে, তাও আবার বেশি দাম দিয়ে।
শাহ আমানত শো রুমের মালিক মো. আজাদ বলেন, শোরুমে নতুন বছরের জন্য নতুন ডিজাইনের কিছু কাপড় তুলেছি। করোনায় অনলাইনে বেচাকেনা বাড়ায় আমাদের বেচাকেনা বেড়েছে। তবে আগের মতো না।
তিনি আরও জানান,বেচাবিক্রি আগের মতো না থাকলেও ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল আমাদের জন সমস্যার। ১ ইউনিট বিদ্যুৎ বিলের দাম ১২ -১৩ টাকা। সে হিসেবে মাসে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা আসার কথা কিন্তু করোনাকালীনও আমরা ৩০ হাজার টাকা করে বিল পরিশোধ করেছি।
পরশ মনি শো রুমের মালিক মো ইসমাইল বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কায় অবর্ণনীয় এক দুর্ভোগে পড়েছিলাম। আবার সব কিছু সীমিত পরিসরে স্বাভাবিকভাবে শুরু হলেও আগের মতো বেচা-বিক্রি নেই। অন্যান্য বছর এই সময়ে দিনে কয়েক লাখ টাকার বিক্রি হতো, সেখানে সারাদিনে ৫০ /৬০ হাজার টাকার বিক্রিও হয় না।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান জানালেন, দোকানে দোকানে পণ্যের বিশাল মজুদ। কিন্তু বিক্রি নেই বললে চলে। লকডাউন এবং পরবর্তীতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তাতে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কার পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও আশানুরূপ বেচাবিক্রি হচ্ছে না। অন্য বছর এই সময় বিয়ের শাড়ি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক আরও অনেক পণ্য বেচাবিক্রি হতো প্রচুর। আগের মতো বিয়ে-শাদী না থাকায় এই বাজারের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। কোন রকমে চলছে দিনকাল। এ অবস্থার মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার আশঙ্কায় আমরা আতঙ্কগ্রস্ত। বড় শো-রুমগুলো অনলাইনে বিক্রি শুরু করলেও ছোট দোকানগুলো তা পারছে না। আমরা সবাইকে অনলাইনে বিক্রির উদ্যোগ নিতে বলেছি।
ভ্যাট নিয়ে সমস্যার কথাও জানালেন তিনি। বললেন, আগে আমরা বছরে ২৮ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাট দিতাম। তা মোটামুটি সহনীয় ছিল। বর্তমানে মাসে দিতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা করে। এটা আমাদের জন্য বোঝা। বিদ্যুৎ বিল নিয়েও সমস্যা। আগে প্রতি দোকানের বিদ্যুৎ বিল ছিল মাসে ৭০০ টাকার মত। তা বর্তমানে দেড় হাজার টাকা। লকডাউনের সময়ও আমাদের অনেককে অস্বাভাবিক হারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থাৎ ভুতুড়ে বিল দিতে হয়েছে।
করোনার প্রকোপ যদি আবারও বৃদ্ধি পায় তাহলে টেরিবাজারের আরও অনেক ব্যবসায়ী ভয়াবহ সংকটে পড়বেন বলে আশংকা আবদুল মান্নানের।