সরবরাহে ঘাটতি নেই, তারপরও বাড়তি
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই, তারপও বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। প্রায় দেড়গুণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এক বছরের ব্যবধানে। দরবৃদ্ধির জন্য আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দোষারোপ করছেন একে অপরকে।
রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবি’র তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে ভারতীয় বড় দানার মসুর ডালের কেজি ছিল ৬৫ টাকা। এখন তা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা। আবার মাঝারি দানার (দেশি) মসুর ডালের দাম ছিল ৮০ টাকা। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা। আর আমদানি করা ছোট দানার মসুর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি। যদিও খুচরা বাজারের বাস্তব চিত্রে সরকারি এই হিসাবের চেয়ে খুচরা বাজারে দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি।
মসুর ডালের সঙ্গে বেড়েছে অ্যাংকর ডালের দামও। ৩৮ থেকে ৪০ টাকার অ্যাংকর এক বছরের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দাম বাড়ায় পিছিয়ে নেই খেসারি ও মুগডালও।
কারওয়ান বাজারে বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে আমদানি করা ভারতীয় মসুর ডালের কেজি ১০৫ থেকে ১১০ এবং দেশি মসুর ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট দানার মসুরের দাম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এ ছাড়া মুগ ডালের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ এবং অ্যাংকর ডাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এর মাঝে দোকানভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা দামের পার্থক্য রয়েছে। কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে বড় দানার মসুর ডাল ৯২, মাঝারি দানা ১১৬ ও ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২১ থেকে ১২২ টাকা কেজি। ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকার মতো বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
পাইকারিতে খেসারির ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজি। বাজারে তিন ধরনের মুগডাল পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভালো মানের মুগ ডাল পাইকারিতে ১১৪ টাকা কেজি। অন্য মুগ ডালের কেজি ৭২ টাকা। পাইকারিতে এক সপ্তাহে মুগ ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর অ্যাংকর ডালের কেজি ৪৯ থেকে ৫০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ডালের উৎপাদন কম থাকায় চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি করতে হয়। আবার আর্ন্তজাতিক বাজারেও দাম কিছুটা বেশি। এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বড় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, মাসখানেক ধরেই ডালের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখন দাম অনেক বেশি। অনেক দিন ধরে বাজারে ডালের সরবরাহে কিছুটা টান রয়েছে। ডেলিভারি কম, তাই দাম বাড়ছে। তবে এখন বাজারে নতুন ডাল উঠছে। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম কমে আসবে।
তারা জানান, ২৫ কেজির প্রতি বস্তা ভারতীয় মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ২২৮০ থেকে ২৩০০ টাকায়। এ ছাড়া দেশি ডাল প্রতি বস্তা ২৮৮০ থেকে ২৯০০ টাকা ও ছোট দানার মসুর (আমদানি করা বা ক্যাঙ্গারু ডাল) ৩০০০ থেকে ৩০২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পৌষ মাসে দেশে বৃষ্টির কারণে ডালের উৎপাদনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে ডাল পরিপক্ব হতে দেরি হয়েছে। এতে আমদানির ওপর নির্ভরতা দীর্ঘায়িত হয়েছে। তবে কয়েক দিন ধরেই বাজারে নতুন দেশি ডাল উঠতে শুরু করেছে। ফলে শিগগিরই দাম কমে আসবে।
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি শফি মাহমুদ বলেন, ডালের দাম পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহ আগের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আরো কমে যাবে। তবে পাইকারিতে দাম কমলেও অনেক সময় খুচরা বাজারে দাম কমতে দেরি হয়। তার দায় তো পাইকারি বাজারের না। খুচরা ব্যবসায়ীরা একটু বেশি লাভ করে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট ডাল উৎপন্ন হয় ৯ লাখ ৩১ হাজার ২১০ টন। এর মধ্যে খেসারি দুই লাখ ৯৬ হাজার ৯৮১ টন, মসুর দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪৬২ টন ও মুগ দুই লাখ ৫২ হাজার ২৬৭ টন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ দুই হাজার ৮৭ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মসুর, অ্যাংকর, ডাবলি ছোলাসহ সব ধরনের ডাল মিলিয়ে দেশে মোট বার্ষিক চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে গড়ে উৎপাদন হয় ৯ থেকে ১০ লাখ টন। ফলে প্রতি বছর চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ ডালের ঘাটতি থাকে। এই ঘাটতি পূরণে ১৭ লাখ টনের মতো ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
এদিকে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ডাল ও ছোলার দাম বস্তাপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেখানে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা উন্নতমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা তিন হাজার ১৫০ টাকা থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ ছোলা বিক্রি হয় তিন হাজার টাকায়। অস্ট্রেলিয়ার মাঝারি মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা তিন হাজার টাকার বেশি দামে। কয়েকদিন আগে তা বিক্রি হয় দুই হাজার ৬০০ টাকায়।
একইভাবে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডালের দামও বাড়ানো হয়েছে। গত সপ্তাহে ভালোমানের মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯৫ টাকা করে। প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হয় চার হাজার ৭৫০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০৮ টাকা করে। আর প্রতিবস্তা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৪০০ টাকায়। খেসারির ডাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।