Home স্বাস্থ্য ঘরে বানিয়ে ফেলুন ডিটক্স পানীয়, কী ভাবে?

ঘরে বানিয়ে ফেলুন ডিটক্স পানীয়, কী ভাবে?

ওজন কমানোর পাশাপাশি ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে বর্তমানে নারীদের জনপ্রিয় পানীয় ‘ডিটক্স ওয়াটার’। কর্মব্যস্ত জীবনে মেপে মেপে পানি পান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না অনেক সময়। আর এ কারণে অনেকেই ভরসা রাখেন এই পানীয় এর উপর। বিশেষ করে শরীরের টক্সিন দূর করতে ডিটক্স ওয়াটার বেশ উপকারী।

ডিটক্স ওয়াটার কি

ফল, সবজি অথবা ভেষজের নির্যাস সমৃদ্ধ পানীয় হচ্ছে ডিটক্স ওয়াটার। একটি বড় কাচের জারে বা বোতলে খোসা না ছাড়িয়ে পছন্দের রসালো ফল, সবজি অথবা ভেষজ একসঙ্গে স্লাইস করে মিশিয়ে পানি দিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা হয় ডিটক্স ওয়াটার। এ ক্ষেত্রে বোতল বা জারটি ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে। তবে আস্ত ফল ব্যবহার করা যাবে না এতে।

১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ফল, সবজি বা ভেষজ সরিয়ে ফেলতে হবে নাহলে সেগুলো পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সারাদিনে অল্প অল্প করেও পান করা যায় এই জাদুকরী পানীয়।

কীভাবে বানাবেন ডিটক্স ওয়াটার

পছন্দের যে কোনো ফলের স্লাইস দিয়েই তৈরি করা যায় ডিটক্স ওয়াটার। সাথে দারুচিনি বা মধু যোগ করা যেতে পারে ফ্লেভারের জন্য। নিচে ওজন কমাতে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য কয়েকটি ডিটক্স ওয়াটারের রেসিপি দেয়া হল।

১. আপেল-দারুচিনি ডিটক্স ওয়াটার

একটি আপেল পাতলা পাতলা করে স্লাইস করে কেটে নিন। সেই সঙ্গে নিন দেড় ইঞ্চির মত লম্বা একটি দারুচিনির টুকরো। কড়া ফ্লেভার চাইলে ৫০০ মি.লি পানিতে পুরোটা আপেল আর দারুচিনি রেখে দিন। আর হালকা ফ্লেভার চাইলে ৫০০ মিলি পানিতে ৩-৪ টুকরো আপেল আর এক টুকরো দারুচিনি দিন।

image

২. শসা, তরমুজ ও সবুজ আপেল ডিটক্স ওয়াটার

শসা, তরমুজ ও সবুজ আপেল ছোট ছোট করে কেটে এক লিটার পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। অথবা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাও ভিজিয়ে রাখা যায়। সকালে সেই পানি পান করবেন।

৩. লেবুর রস, আদা, পুদিনা ডিটক্স ওয়াটার

এক বোতল পানিতে অর্ধেকটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে তাতে আদা আর লেবুর পাতলা স্লাইস যোগ করুন। এরপর কিছু পুদিনা পাতাও মেশাতে পারেন৷ সকালবেলা খালি পেটে এই পানীয় খেলে হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়।

৪. লেবু, অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও মধু ডিটক্স ওয়াটার

imageএক লিটার পানিতে পাঁচ থেকে ছয় টুকরা লেবু, এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও এক টেবিল চামচ বা দুই চা–চামচ মধু মিশিয়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কাচের জারে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই পানীয় সারা দিন অল্প অল্প করে পান করতে হবে।

৫. ভিটামিন সি ডিটক্স ওয়াটার

২ থেকে ৩ পিস মাল্টা, ২ টেবিল চামচ জাম্বুরা, ৮ থেকে ১০টি পুদিনাপাতা, গোল করে কাটা কয়েক টুকরা লেবু সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ফ্রিজে রাখতে পারেন। পরদিন দুই ঘণ্টা পরপর সারা দিন পানীয়টি পান করে শেষ করতে হবে

ডিটক্স ওয়াটারের উপকারিতা

image১. কমলা বা লেবুর ডিটক্স ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং ওজন কমায়।

২. দারুচিনি ও আদার ডিটক্স ওয়াটার শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে, প্রদাহ দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও দারুচিনি রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে।

৩. এই পানীয় শরীরের দূষিত উপাদান দ্রুত বের করে দিতে সাহায্য করে।

৪. ডিটক্স ওয়াটার দেশের হজম ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৫. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও লাবণ্য ফিরিয়ে আনে।

ডিটক্স ওয়াটারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কোনও কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ভাল নয়। সঠিক নিয়ম না মেনে এবং সঠিক মাত্রায় না খেলে ‘ডিটক্স ওয়াটার’ও শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

১. প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডিটক্স ওয়াটার পানে অতিরিক্ত প্রস্রাবের ফলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে সারাদিন ক্লান্তিভাব, বমি ভাব, মাথার যন্ত্রণা হতে থাকে। শরীরের কার্যক্ষমতাও কমে যায়।

২. ডিটক্স ওয়াটার সাময়িকভাবে ওজন ঝরাতে সাহায্য করলেও দীর্ঘদিন এই অভ্যাস চলতে থাকলে বিপাকহার কমে যায়। ফলে শরীরে পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩. যাদের কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগ রয়েছে, তাদের এ ধরনের পানীয় পানের আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

কখন পান করবেন ডিটক্স ওয়াটার

সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে ডিটক্স ওয়াটার না পান করাই শ্রেয়। নয়তো ডায়ারিয়া, বুক জ্বালা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে ডিটক্স ওয়াটার পান করার সবচেয়ে উপযোগী সময় হচ্ছে সকালে নাস্তার পর বা বিকেলে নাস্তার পর।

চেষ্টা করবেন প্রতিদিন ফ্রেশ ডিটক্স ওয়াটার পান করার। দুই-তিনদিন আগের ডিটক্স ওয়াটার পান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।