Home First Lead তিস্তা সমস্যার দ্রুত সমাধানে ভারতের আশ্বাস

তিস্তা সমস্যার দ্রুত সমাধানে ভারতের আশ্বাস

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। ২৭ মার্চ শনিবার বিকেলে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান। দুই সরকারপ্রধান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন।

বৈঠক শেষে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিস্তাসহ যৌথ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার ওপর বাংলাদেশের অধিকারের বিষয়টি বরাবরের মতোই জোরালোভাবে উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তিটি দ্রুত স্বাক্ষরে ভারত আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার- এই ছয়টি ট্রান্স বাউন্ডারি নদীর পানিবণ্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্তকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে দুই দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ‘সুরমা-কুশিয়ারা সেচ প্রকল্পে’ কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারের উদ্দেশে রহিমপুর খালের অবশিষ্টাংশ খননের আবশ্যকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে কুশিয়ারা নদীর পানির জন্য প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকে ভারতের দ্রুত সম্মতি কামনা করেছে বাংলাদেশ।

নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার বিষয়ে উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে ভারত। সীমান্তে একজন বাংলাদেশিও যেন কোন কারণে বিএসএফ কর্তৃক নিহত না হন, সেটি নিশ্চিত করার জোরালো দাবি উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সীমান্তে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাবার নির্দেশনা দিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ঝুঁকিপূর্ণ চলাফেরা পরিহার করতে সীমান্তবর্তী এলাকার নাগরিকদের সচেতন করে তোলার কার্যক্রম চালু করা হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনিও (মোদি) বলেছেন, তাদের ফিরে যেতে হবে।’ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০২২ সালে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ড. মোমেন বলেন, ভারত স্বাধীন বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেছিল ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। এ জন্য ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যৌথ উদযাপনের ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা, বিশেষত নেপাল ও ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে উপআঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যয় সাশ্রয়ের নিরিখে নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ ব্যবহারে আগ্রহী বাংলাদেশ। ভুটানের সঙ্গে সদ্য সম্পাদিত যৌথ বিবৃতিতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রসঙ্গটি ওঠে এসেছে। বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এলাকায় বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে চায়। এলওসির আওতাধীন প্রকল্পগুলোকে আরও বেগবান করার ব্যাপারেও দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে তারা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। সেদিন তিনি ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর উদ্বোধন করেন। শনিবার সকালে সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে মন্দির পরিদর্শন এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকায় ফেরেন নরেন্দ্র মোদি।

বিকেল ৫টার পর নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। দুই সরকারপ্রধান প্রথমে কিছু সময় একান্তে বৈঠক করেন। পরে তাদের নেতৃত্বে শুরু হয় দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, যা চলে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের সম্পর্কের মূল্যায়ন করে ভবিষ্যতের পথনকশা কেমন হবে, সেটাই ঠিক করতে বৈঠকে বসেন দুই সরকারপ্রধান। এরপর সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয় এবং প্রকল্পগুলো ভার্চুয়ালি উদ্বোধন হয়।

সমঝোতা স্মারক

১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ২. বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর অব ইন্ডিয়ার (আইএনসিসি) মধ্যে সহযোগিতা। ৩. বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূর করতে একটি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা। ৪. বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিজিএসটি) সেন্টারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, কোর্সওয়্যার ও রেফারেন্স বই সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ সহযোগিতা। ৫. রাজশাহী কলেজ মাঠের উন্নয়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন।

প্রকল্প উদ্বোধন

এরপর ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ‘মিতালী’ এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলসহ কয়েকটি প্রকল্প ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিলাইদহের সংস্কার করা কুঠিবাড়ির বর্ধিত রবীন্দ্র ভবন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আশুগঞ্জে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্বোধন, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, তিনটি সীমান্ত হাট, ভারতের উপহার ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স এবং স্মারক ডাকটিকিটের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রাতে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন নরেন্দ্র মোদি।