Home আন্তর্জাতিক তুরস্কের ‘গ্র্যান্ড কার্তাল’ হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭৬ জনের মৃত্যু

তুরস্কের ‘গ্র্যান্ড কার্তাল’ হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭৬ জনের মৃত্যু

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: তুরস্কের বোলু পর্বতমালার ‘গ্র্যান্ড কার্তাল’ হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে আরও কয়েক ডজন মানুষ। ঘটনার সময়ে হোটেলে ২৩৪ জন অতিথি ছিলেন।

তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কামাল মেমিসোগলু জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত ৭৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গিয়েছে। প্রথমদিকে এই সংখ্যা ৬৬ বলা হয়েছিল। পরে তা ৭৬ বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কামাল মেমিসোগলু আরও জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর এবং ১৭ জনকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উত্তর-পশ্চিম তুরস্কের জনপ্রিয় স্কি রিসর্ট, ‘কার্তালকায়া’র ভিতরে অবস্থিত এই হোটেলটি। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ১২তলা হোটেলটির রেস্তোরাঁর মেঝেতে প্রথম আগুন লেগেছিল। সেখান থেকে দ্রুত আগুন ভবনটির বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে।মুহূর্তে হোটেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনেক অতিথিই বারান্দার রেলিং থেকে বিছানার চাদর বেঁধে উপরের তলা থেকে নীচে নামার চেষ্টা করেন। বহু মানুষ জানালা দিয়ে নীচে লাফও মারেন। বোলুর গভর্নর আব্দুল আজিজ আইদিন জানিয়েছেন, এই ভাবে আগুন থেকে বাঁচতে গিয়ে অন্তত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনার বেশ কিছু ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, হোটেলটির ছাদ এবং উপরের তলায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ছাদ থেকে গাঢ় ধোঁয়া উঠতে দেখা গিয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘরের জানালা দিয়ে দেখা গিয়েছে ভিতরে আগুন জ্বলছে। হোটেলের লবিও পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে। সেখানে প্রচুর ভাঙা কাঁচ এবং পোড়া আসবাবপত্র পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

আতাকান ইয়েলকোভান নামে হোটেলের তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার হওয়া এক অতিথি বলেছেন, ‘উপরের তলার অনেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল। কোনও অ্যালার্ম পর্যন্ত বাজেনি। আমার স্ত্রী পোড়া পোড়া গন্ধ পেয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম।’

অল্পের জন্য এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে প্রাণে বেঁচেছেন স্কি প্রশিক্ষক নেকমি কেপসেতুতান। তিনি একাই প্রায় ২০ জন অতিথিকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে এসেছেন। স্কি প্রশিক্ষক জানিয়েছেন, ঘন ধোঁয়ার ভিতরে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। তাই আগুন লাগলে সেখান থেকে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসার পৃথক রাস্তা থাকলেও, অনেকেই সেই রাস্তা খুঁজে পাননি।

অতিথিদের একাংশের অভিযোগ, দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতে অনেক দেরি করেছেন। তাঁদের দাবি, খবর দেওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পরে সেখানে এসে উপস্থিত হয় দমকলের প্রথম ইঞ্জিনটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হোটেলের ভিতরের অংশ ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। তাঁরা শ্বাস নিতে পারছিলেন না। হোটেলের অগ্নি সনাক্তকরণ ব্যবস্থাও কাজ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রিসর্টটির ভিতরে অবস্থিত বাকি হোটেলগুলিও খালি করে দেওয়া হয়েছে। অতিথিদের বোলুর অন্যান্য হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

আঙ্কারায় এক ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

‘গ্র্যান্ড কার্তাল’ হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানিতে  আজ সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।