আগরতলা (ত্রিপুরা ) থেকে রাকেশ দেবনাথ:বিপ্লব দেবের ইস্তফার মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ত্রিপুরার গদিতে নয়া মুখ্যমন্ত্রী। এবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসলেন মানিক সাহা। তিনি ছিলেন ত্রিপুরা বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা দলের রাজ্যসভার সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন জিষ্ণু দেববর্মাও। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সাংগঠনের মাথাকেই এবার প্রশাসনিক প্রধানের দায়িত্বে আনল বিজেপি। জল্পনা শোনা যাচ্ছে এ ক্ষেত্রে হতে পারে ক্ষমতার অদলবদল। রাজ্য বিজেপি সভাপতি হতে পারেন বিপ্লব দেব।শনিবার রাজ্যপালের কাছে গিয়ে ইস্তফা দেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ এখনও একবছর বাকি। আগামী বছরেই সেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগেই ইস্তফা দিলেন বিপ্লব কুমার দেব। তারপরেই তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্ব। সেখানেই ত্রিপুরা রাজ্যের সভাপতি মানিক সাহাকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য মানিক সাহা এখন রাজ্যসভার সাংসদ। গত চার বছর সেই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন বিপ্লব কুমার দেব। শনিবার তিনি সেখানের রাজ্যপালের কাছে গিয়ে ইস্তফা জমা দেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মানিক সাহাকে সেখানের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।
মানিক সাহা নিজে একজন দন্ত চিকিৎসক। ২০১৬ সালে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। ২০২০ সালে তাঁকে সেই রাজ্যের সভাপতি করা হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে ত্রিপুরার রাজ্যসভার একমাত্র আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হন। চলতি বছরেই সেই রাজ্যে দলের নতুন ১৮ জনের কমিটি করেছিলেন তিনি। অনেকেই তাঁকে পদ থেকে সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকেই আগামী বছরের ভোটের আগে বড় দায়িত্ব দেওয়া হল।
রাজ্যপালের কাছে গিয়ে ইস্তফা দেওয়ার পর বিপ্লব জানান, নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্যের কোনও প্রশ্নই নেই। তাঁর কথায়, “সরকার যাতে দীর্ঘ সময় রাজ্যে ক্ষমতায় থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর সেই কারণে সংগঠন মজবুত করা প্রয়োজন রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “দল সংগঠনের যে দায়িত্ব দেবে তা অবশ্যই পালন করব। প্রত্যেক কাজের একটা সময়সীমা থাকে। যে যে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে তা পালন করেছি। ত্রিপুরার মানুষের সঙ্গে ন্যায় করার চেষ্টা করেছি। মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে সেই চেষ্টা করেছি।” বিপ্লব দেবের সংযোজন, “দীর্ঘ সময় সরকার ধরে রাখার জন্য আমার মতো ব্যক্তিকে সংগঠনের কাজে ব্যবহার করতে দল লাভবান হবে বলে মনে করছে।” অর্থাৎ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানে পদ থেকে সরে গিয়ে সংগঠন গোছাতে চাইছেন তিনি,ইঙ্গিত দিয়েছেন বিপ্লব। এদিকে বিপ্লব দেব ইস্তফা দেওয়ার পরে তৃণমূল কংগ্রেসের টুইট করে লিখেছে , ”গুডবাই। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে অব্যাহতি পেলেন।”
২০১৮ সালের ৯ মার্চ ভারতের ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব। বিপ্লব রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব পান ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। তার পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়। উপজেলার মেঘদাইর গ্রামের হিরুধন দেব ও মিনা রানী দেবের একমাত্র ছেলে বিপ্লব।
১৯৭১ সালে তার মা-বাবা ত্রিপুরা চলে যান। তারা সেখানেই স্থায়ী বাসিন্দা হন। বিপ্লবের অনেক আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে কচুয়ায় বসবাস করছেন। তার চাচা প্রাণধন দেব কচুয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি।
এদিকে ত্রিপুরায় মানিক সাহার নামকে ঘিরে বিজেপির অন্দরের দ্বন্দ্বকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবে দলীয় নেতৃত্ব যথেষ্ট অস্বস্তিতে। দলের একাংশের মতে বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মানিক সাহার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এনিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনেও ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। ত্রিপুরার বিজেপি নেতা সুব্রত চক্রবর্তী সংবাদ মাধ্যমে বলেন, সকলে সব বিষয়ে একমত হবেন এমনটা নয়। কারোর কোনও অন্য মত থাকতে পারে। এটা দলের আভ্যন্তরীন বিষয়।