Home অন্যান্য থোড় মোচার ঘরোয়া ম্যাজিক

থোড় মোচার ঘরোয়া ম্যাজিক

সাবিনা ইয়াসমিন রিংকু

কলাগাছ নিজের জীবনকে মানব-সেবার জন্যে উৎসর্গ করে দেয়। ফুল, ফল, কাণ্ড, আঁশ, পাতা… এমনকি কলা গাছের পুরো শরীরটাই মানুষের কাজে লাগে। কাঁচকলা, পাকা কলা, মোচা, থোড় খাওয়া যায়। পাতা মুড়িয়ে বানানো যায় চমৎকার পাতুরি। বাসনের অভাবে বা শখ করে কলাপাতার ওপর ভাত তরকারি খাওয়া যায়। শ্যামবাজারে মোদকের হিঙের কচুরি আর খোসাওয়ালা চৌকো চৌকো আলু দিয়ে ছোলার ডাল কলাপাতার ওপরেই পরিবেশন করা হয়। কলাপাতার নীচে প্লেটের বালাই থাকে না। তরকারির থিকনেসটা এমন পরিমিতির মধ্যে রাখা হয় যে গড়িয়ে টেবিলে নেমে ঢালু খোঁজে না।
মাছ, ডিম, চিকেন, পনীর এমনকি মিষ্টি কুমড়োরও পাতুরি বানানো যায়। যে জিনিসের পাতুরি বানাতে চান, সেটার সঙ্গে একটু সর্ষেবাটা, নারকেলকোরা, নুন, কাঁচালংকা বাটা আর কাঁচা সর্ষের তেল মাখিয়ে রেখে দিন আধঘণ্টা। তারপর লেডিজ রুমালের সাইজের কলাপাতা চারকোণা করে কেটে নিয়ে গ্যাসের আগুনে সেঁকে পাতাগুলো নরম করে নিয়ে ওর মধ্যে মশলা মাখানো বস্তুটা (যেটা দিয়ে পাতুরি বানাবেন) রেখে ভালো করে মুড়িয়ে সুতো দিয়ে বেঁধে নিন। তারপর ননস্টিক প্যান গরম করে তাতে তেল ব্রাশ করে পাতাগুলো উল্টেপাল্টে সেঁকে নিন।

পেট খারাপে কাঁচকলা আর শিঙিমাছের পাতলা ঝোল পথ্য হিসেবে জনপ্রিয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম আবার পাকা কলায়। কাঁচকলা বড় বড় টুকরো করে কেটে ভেজে আদা, রসুন, গরম মশলা সহযোগে দারুণ একখান রান্না হয়। ‘আদায় কাঁচকলায়’ শব্দটি কাঁচকলা রান্নার সময় তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। কাঁচকলাতে আদা দিলে পৃথিবী ভেঙে পড়ে না। আদা দেওয়ার পরেও কলা ভালোভাবে সেদ্ধ হয়। উপরন্তু রান্নার সময় আদার গন্ধ এবং আদার ঝাল ভাবটুকু আনন্দ সহকারে শুষে নেয়।

কাঁচকলার খোসাও তো ফেলে দেওয়ার বস্তু নয়। কিছু মানুষজন আবার কাঁচকলার খোসা দিয়ে হরেকরকম পদ বানিয়ে কলার শাঁস নিয়ে ভারী চিন্তায় পড়ে যান। কাঁচকলার খোসাবাটা গরম ভাতে চরম উপাদেয়। খোসাবাটায় একটু কুচো চিংড়ি মিশিয়ে দিলে একেবারে মারহাব্বা। কাঁচকলার খোসা ভাপিয়ে ঝিরি ঝিরি করে কেটে শিলে ছ‍্যাবড়া ছ‍্যাবড়া করে বেটে নিন। সর্ষের তেল গরম করে দুটো শুকনো লংকা মচমচে করে ভেজে রাখুন। এবার শুকনো লংকা দুটো নুন দিয়ে হাতের সাহায্যে মিহি করে পিষে একটা বাটিতে রাখুন। ওই বাটিতে কাঁচকলার খোসা বাটা, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা লংকাকুচি, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে মেখে নিয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজি ভেজে ফেলুন। কাঁচকলার খোসার পেঁয়াজি। কাঁচকলার কোপ্তা, টিকিয়াও অনবদ্য খেতে হয়।
ডয়রা কলার মোচা আর থোড় বিখ্যাত। গদার সাইজের ডয়রা কলার মোচা বেশ দামি। তবে আমার মতে কাঁঠালি কলার মোচা, থোড়ই সবচেয়ে ভালো খেতে। ডয়রা কলার মোচা বা থোড়ের মত অত নাম নেই বাজারে, কিন্তু খাদ্য রসিকরা তাদেরকেই পছন্দ করেন। কাঁঠালি কলার রোগা টিংটিংয়ে থোড়ের মধ্যে একটা পেলব ব্যাপার আছে। সুন্দরীর গালের ত্বকের মত নরম। নখ ফোটালে নখের আরাম লাগে। কিন্তু প্রশংসাপত্র-প্রাপ্ত ডয়রা কলার থোড় একটু খচখচে টাইপের হয়। রান্নার পর একেবারে মোলায়েম হয়ে গলে যায় কাঁঠালি কলার থোড়। না ভাপিয়ে নুন দিয়ে মেখে খানিক রেখে তারপর রান্না করলেও চলে।

কাঁচকলার মোচা খুব তেতো হয়। চুন দিয়ে ভিজিয়েও কোনওভাবে খাওয়ার যোগ্য করে তোলা যায় না। তাই না খাওয়াই ভালো। তেতো সবজি খেলে খুব উপকার… এই ফর্মুলা মেনে তিতকুটে মোচা
খেতে যাবেন না যেন! তাহলে শুধু আপনাকেই খেতে হবে। বাড়ির আর কেউ খাবে না।

কাঁচকলা ভাজা, কাঁচকলার চিপস যদি না খেয়ে থাকেন তো খেয়ে দেখবেন একবার।
শুধু কাঁচকলা আর পাটপাতা দিয়ে অসাধারণ একটা শুক্তো হয়।
কাঁচকলা লম্বাভাবে টুকরো করে নেবেন। তেতো পাটপাতা নেবেন পাঁচ/ছটা। কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে তেজপাতা ও শুকনো লংকা ফোড়ন দিন। এবার মেথি গুঁড়ো আর সর্ষে গুঁড়ো দিয়ে কাঁচকলাগুলো কড়াইতে ছেড়ে দিন। একটু জল দিয়ে কষুন। আঁচ কমিয়ে হলুদ গুঁড়ো আর তিল বাটা দিন। নেড়েচেড়ে পাট পাতাগুলো দিয়ে দিন। আরেকটু জল দিন। কলা সেদ্ধ হয়ে গেলে নুন ও ময়দা জলে গুলে ঢেলে দিন এবং গা-মাখা হলে নামিয়ে নিন। নামানোর আগে একটু ঘি দিতে পারেন। খাওয়ার আগে এই শুক্তোর সুগন্ধ আপনার দিল জিতে নেবেই।