বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
অপেক্ষা আর মাত্র কিছুক্ষণের। ১২ নভেম্বর থেকে ভারতের উত্তরাখন্ডের দক্ষিণকাশী টানেল বিপর্যয়ে অন্ধকারে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিক তারপর বের হয়ে আসবেন। সেই সঙ্গে অবসান হবে বেঁচে থাকার জন্য তাদের ১৭ দিনের লড়াই। বের হতেই তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে হাসপাতালে। সবার জন্য টানেলের সামনে প্রস্তুত অ্যাম্বুলেন্স, অস্থায়ী হাসপাতাল। এখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে শ্রমিকদের।
উত্তরকাশী জেলা হাসপাতালে ৪১টি শয্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রত্যেক শয্যায় রয়েছে অক্সিজেনের ব্যবস্থা। ট্রমা কেয়ার ইউনিট, আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শরীরে পাশাপাশি মনের চিকিৎসাও চলবে শ্রমিকদের। এত দিন সুড়ঙ্গের ভিতরে রোজ তাঁদের পাঁচ ঘণ্টা করে কাউন্সেলিং চলেছে। পাশাপাশি বাইরে থেকে চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন।
চাকা লাগানো ট্রলিতে করে আড়াই ফুট চওড়া পাইপের ভিতর দিয়ে বের করে আনা হবে শ্রমিকদের। হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসার সক্ষমতা তাদের নেই। ওদের বের করে আনার আগে ভিতরে প্রবেশ করবেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। শ্রমিকদের বোঝাবেন, কী ভাবে ওই পাইপ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে তাদের। পাইপের যে সব জায়গায় ঝালাই হয়েছে, সেগুলি বেশ ধারালো। সেখান দিয়ে বেরোনোর সময় আঘাত লাগতে পারে শ্রমিকদের। এ সব ঝুঁকির কথাই বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, সুড়ঙ্গ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে বেরোবেন শ্রমিকেরা। কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা তাদের নেই। সে কারণে চাকা লাগানো ট্রলির মাধ্যমে পাইপ দিয়ে তাদের বার করে আনা হবে।
দুর্ঘটনার পরপরই শুরু হয় বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে তাদেরকে উদ্ধারের তৎপরতা। উদ্ধার অভিযান বারে বারে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন পথে চলছে উদ্ধারকাজ। একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে শুরু হয়েছে অন্য উপায়ে উদ্ধারকাজ। শেষ হয়েও যেন শেষ হতে চায়নি। ওদের অন্ধকার সুড়ঙ্গের জীবন। মার্কিন যন্ত্র অগার মেশিন দিয়েই সুড়ঙ্গ কাটার কাজ চলছিল। পাথর কেটে রাস্তা বানিয়ে ধীরে ধীরে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল মেশিনটা। শুক্রবার বিকেলের দিকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে একটি ধাতব বস্তুর সঙ্গে জোর টক্কর লাগে। ব্যস, নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় মেশিনটি। হাজার চেষ্টা করেও সেই মেশিন আর ঠিক করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। শনিবার সকালে আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান আর্নল্ড ডিক্স স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ওই মেশিন আর মেরামত করা সম্ভব নয়।তারপর ম্যানুয়াল দিয়ে উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়। সেই মতো দক্ষ কাটার শ্রমিকদের উদ্ধারের কাজে নিয়ে আসা হয় হায়দরাবাদ থেকে। সেই শ্রমিকদের প্রচেষ্টায় উদ্ধার অভিযানের সফলতা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এলো।