বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
আজ আমরা এমন এক ব্যক্তির গল্প বলতে যাচ্ছি একসময় তার পকেটে ছিলনা এক টাকাও। কিন্তু তিনি আজ তার কাজের জোরে কোটি কোটি টাকার মালিক। ছোটবেলায় নিজের সব যন্ত্রণা কাটিয়ে বন্ধুদের পরামর্শে কাজের সন্ধানে মুম্বাই যেতে হয় মাত্র ১৬ বছর বয়সী ছেলেটিকে। যে প্রায় সব কিছু হারিয়ে ফেলে। পকেট একদম ফাঁকা, মাথার ওপর থাকার কোন ছাদ নেই। আর মাত্র কিছুদিন আগে তার বাবা এবং ভাই মারা গিয়েছেন।
শিশুটির নাম সুদীপ দত্ত, সে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের বাসিন্দা। তার বাবা কাজ করতেন সেনাবাহিনীতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৭১ সালে লড়াইয়ের পর শরীর ভেঙ্গে যায় তার। বাবার এহেন দূর্বলতার পর তার দাদার ধরা পড়লো জীর্ণ রোগ। এবং রোগের চিকিৎসা না করতে পারায় মারা যান তার দাদা। আর ছেলেকে এভাবে চোখের সামনে চলে যেতে দেখে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেন তার বাবা। এরপর বাড়ির অবস্থা আরও খারাপ হয়, এবং বাকি চার ভাইবোনের দায়িত্ব এসে পড়েছে সুদীপের কাঁধে।
এরপর তিনি নিজেই কারখানা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং এজন্য ১৬,০০০ টাকা জমা দেন। সে সময় নিজেকে সামলাতে না পারলেও সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কারখানার সাত শ্রমিকের পরিবারের দায়িত্ব নেন সুদীপ। কারখানাটি কেনার জন্য ১৬,০০০ টাকা খুব কম হওয়ায় তার প্রথম দুই বছরের লাভ মালিকদের মধ্যে বিতরণ করার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল। এইভাবে তিনি সেই কারখানার মালিক হন যে কারখানায় তিনি একসময় শ্রমিক ছিলেন।
বর্তমানের মত তখন অ্যালুমিনিয়াম প্যাকেজিং শিল্পের অবস্থা ভালো ছিল না। এবং বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিগুলি বড় অর্ডার পেয়ে কিছু লাভ করত। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি হাল ছাড়েননি। কঠোর পরিশ্রম করে টিকে থাকেন বাজারে। এবং নিজের প্রোডাক্টের গুণগত মান বজায় রাখেন। এরপরই ঘুরতে শুরু করে ভাগ্যের চাকা। নেসলের মত কোম্পানি থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে। এমনকি সে সময় বেদান্ত গ্রুপের থেকে কড়া টক্কর মিললেও পরবর্তীকালে তারাও নতজানু হয়ে পড়ে। এবং সুদীপবাবু কিনে নেন ইন্ডিয়ান ফয়েল কোম্পানিকে।
এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। বেড়ে চলে তার ব্যবসা। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল অবধি তারা ২০ টি উৎপাদন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছিল। সুদীপ দত্তর কোম্পানি ESS DEE ALUMINIUM PVT LTD-এর নাম বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুদীপ দত্তকে অনেকেই প্যাকেজিং শিল্পের নারায়ণমূর্তি বলেন। এবং বর্তমানে তার কোম্পানির মোট মূল্য ১৬০০ কোটিরও বেশি।বর্তমানে ব্যবসার পাশাপাশি, সুদীপবাবু একটি ফাউন্ডেশন চালাচ্ছেন যা গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র যুবকদের নতুন সুযোগ দিয়ে তাদের সাহায্য করে।