বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১২তম অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের ১৮০ টি দেশের দূর্নীতিচিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি এই তালিকায় বাংলাদেশের স্কোর গতবারের সমান বলে জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
আজ (বৃহস্পতিবার) সারা বিশ্বে ‘দুর্নীতি ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় গতবারের সমান ২৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম এবং বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্য দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে আফগানিস্থান। দেশটির স্কোর ১৯।
সূচকে ১০০ ভিত্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত ও সবচেয়ে কম স্কোরকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সূত্রে জানা যায়, এবারের সূচকে গড় স্কোর হল ৪৩। এবার ৪৩ বা তার বেশি স্কোর পেয়েছে ৫৩টি দেশ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কোর ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ডের, দেশ দুইটি ১০০ মধ্যে সমান ৮৮ স্কোর পেয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে কম স্কোর পেয়েছে দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়া। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশ দুইটির স্কোর ১২।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, এবার ৭০টি দেশের স্কোর আগের মতই রয়েছে, ৬২ দেশের স্কোর বেড়েছে এবং ৪৮টি দেশের স্কোর কমেছে। এবারও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থান ভুটানের। দেশটির স্কোর ৬৮। এছাড়া মালদ্বীপ ৪৩, ভারত ৪০ ও পাকিস্তানের স্কোর ৩১ ।
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথমসারির দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, অস্ট্রিয়া, কানাডা।
অপর দিকে, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করা দেশ গুলো হলো দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, ভেনেজুয়েলা, সুদান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, হায়তি, কঙ্গো ও আফগানিস্তান।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ১০০ এর মধ্যে ২৬ স্কোর পেয়েছে। নিচের দিক থেকে হিসাব করলে ১২তম এবং উপরের দিক থেকে হিসেব করলে ১৪৬তম। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সমান স্কোর। ২০১৯ সালের তুলনায় নিচের দিকে ১৪তম থেকে ১২তম অবস্থানে নেমে এসেছে। এটাই বেশি আলোচিত হয়। ৩১টি এশিয়া প্যাসিফিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ , কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান এবং উত্তর কোরিয়ার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এই তিনটি দেশের তুলনায় কেবল আমরা ভালো। তিনটি কারণে আমাদের অবস্থান হতাশাব্যঞ্জক। ২০০১ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত স্কোরে ক্রমাগত অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। তবে স্কোর ২০ এর কোটাতে স্থির হয়ে আছে। যেটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য ও হতাশাজনক বলে মনে করছি।
তিনি আরো জানান, নিচের দিক থেকে হিসেবে করলে বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং কমেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমরা সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিলাম, তারপর ওপর থেকে ক্রমাগত র্যাঙ্কিং বেড়েছে। আমরা মনে করি যেসব উপাদান ফলাফলের ওপরে কাজ করেছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের বড় ধরণের নিরসন, দুর্নীতি ও বিচারহীনতা বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও রাজনীতিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের উপায় হিসেবে বিবেচনা করা। এসবের কারণে মূলত বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি ঘটেছে।