মো: আজিজার রহমান
খানসামা (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদটি প্রায় ধ্বংসের দিকে। অবহেলা ও সংস্কারের অভাবেই দিন দিন খানসামাবাসীর কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদ।
খানসামা উপজেলার পরিসংখ্যানের তথ্যে অনুযায়ী এই মসজিদটি প্রায় আড়াই শ বছর পূর্বে বাংলা ১১৭২ সালে মীর্জা লাল বেগ মুসলিম সম্প্রদায়ের নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্ব ধারে মীর্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত। এলাকার প্রবীণ লোকজন বলেন যে, এক সময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। যে কারণে এখানে ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোন কারণে তারা মসজিটির আশপাশ এলাকার ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ফলে এটি অযতœ-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরবর্তীতে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে মসজিদটি।
তবে মীর্জা লাল বেগের এই মসজিদকে কেন্দ্র করে মির্জার মাঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠত হয়। এছাড়াও একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আওকরা মসজিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।
মজার ব্যাপার হলো, মীর্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কি নাম রেখেছেন তাও কেউ বলতে পারে না। লোকজন মসজিটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় চলাচলের সময় এটির মধ্যবর্তী অংশে দূর থেকে দাঁড়িয়ে কথা বললে এক সময় জোরে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হত। তাই শুনে তারা ভাবত মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদটির নাম হয়ে যায় আওকরা মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ। এখনও এটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে গিয়ে নষ্ট হওয়ায় এবং এর গায়ে আগাছা পরিপূর্ণ হওয়ায় আগের মত আর আওয়াজ হয় না।
স্থায়ী একাধিক প্রবীণ লোকজনের সাথে আলোচনা করেও মসজিদটিতে সর্বশেষ কত সালে নামাজ আদায় হয়েছে তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। অথচ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এটি ঐতিহ্যবাহী প্রতœতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণার এক বছর হলেও এটি সংস্কারে এখনও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই।
মসজিদ সংস্কারের সরকারি উদ্দ্যাগ না থাকলেও হাল ছাড়েরনি এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর উদ্যোগে মসজিদটি পরিষ্কার করে নামাজ পড়ার উপযোগী করে তুলেছে। কিন্তু দেয়ালে ফাটল থাকার কারণ যে কোন সময় দুঘর্টনা ঘটতে পারে বলে অনেকে মনে করেন হয়। প্রতœতত্ব বিভাগ যদি দ্রুত সংস্কার করে, তাহলে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. মফিজ উদ্দিন বলেন যে, এটি শুধু খানসামার ঐতিহ্যবাহী নির্দশন নয় সারাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ইট রক্ষার দায়িত্ব যেমন সরকারের তেমনি এলাকাবাসীও। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদটি পরিষ্কার করে টিনের ছাউনি, মাইক ও নলকূপ স্থাপন করে নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু দ্রুত সংস্কার না হলে ঐতিহ্যবাহী নির্দশনটি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকুল আবেদন করি যাতে ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদটি ধ্বংস হয়ে না যায়। সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।বার্তা প্রেরক