বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ভারতের গুজরাটে ৫ বছর বয়সি ফুটফুটে এক মেয়ে শিশুকে অপরণের পর নরবলি দিয়ে মন্দিরে রক্ত উৎসর্গ করা হয়েছে। এই অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি গুজরাতের ছোটাউড়েপুর জেলার পানেজ গ্রামের। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা লালা তাড়ভিকে শিশুটিকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, শিশুটিকে বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করেন লালা। তার পর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে শিশুটির গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করেন বলে অভিযোগ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌরব আগরওয়াল জানিয়েছেন, শিশুটিকে কুড়ুল দিয়ে গলায় আঘাত করেন। শিশুটির গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলে সেই রক্ত সংগ্রহ করেন অভিযুক্ত। তার পর তাঁরই বাড়ির কাছে একটি মন্দিরে সেই রক্ত উৎসর্গ করেন।
মন্দিরের সিঁড়িতে রক্ত দেখে গ্রামবাসীরা শিউরে ওঠেন। তার পরই মন্দির থেকে কিছুটা দূরে শিশুটির দেহ উদ্ধার হয়। মন্দিরের কাছেই রক্তমাখা অস্ত্র নিয়ে দেখা যায় অভিযুক্তকে। গ্রামবাসীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, এটি ‘নরবলি’র ঘটনা। তবে শিশুটিকে খুনের নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকটি বাচ্চা মেয়েকে বলি দেওয়ার জন্য অপহরণ করে নিয়ে যায় ভুবা। কিন্তু মেয়েটিকে হত্যা করার আগেই গ্রামবাসীরা তাকে ধরে ফেলে। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। এরপর ভুবার বাড়ির গিয়ে ওই ৫ বছরের শিশুটির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত ভুবাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির ঘাড়ে ও গলায় গভীর ক্ষত রয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্তের কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে। প্রশাসনও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে। কুসংস্কারের অভিশাপ যে এখনও ভারতের কয়েকটি গ্রামে রয়েছে ফের তা আবার প্রমাণিত হল এই ঘটনায়।
কেন ঘটে এই ধরনের ঘটনা?
কুসংস্কারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিদের মতে, ভারতে নব়বলিদানের অনুশীলন মূলত তন্ত্রবাদের সঙ্গে জড়িত। এই আধ্যাত্মিক আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেছিল মধ্যযুগে। অষ্টম শতকে ভারতে তান্ত্রিক সম্প্রদায়টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বহু তান্ত্রিক আচারের সঙ্গেই রক্ত অর্ঘ দেওয়া, নব়বলি এবং নরমাংস ভক্ষণের মতো ভয়ানক বিষয় জড়িত ছিল। বর্তমান ভারতে নরবলি, কুসংস্কারের মতো একটি বৃহত্তর সমস্যার অংশ। স্বঘোষিত ধর্মগুরু বা ওঝারা ধনলাভ থেকে শুরু করে রোগ নিরাময় করা বা দেবতাদের অনুগ্রহ লাভের আশা দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে নব়বলিদানে রাজি করায়।
আসল, ভারত দ্রুত উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হলেও, এখনও ধর্মীয় বিশ্বাসই দেশের সামাজিক কাঠামোর সব থেকে বড় অংশ। আর এই বিশ্বাসে ভরা মনকেই কাজে লাগায় হাজার হাজার তান্ত্রিক, ওঝা এবং স্বঘোষিত ধর্মগুরুরা। দেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামে তাদের ব্যবসা চলে। এই ব্যক্তিরা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে নিজেদের দাবি করে। জাদুবিদ্যার মাধ্যমে অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর প্রতিশ্রতি দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। আর অর্থনীতির চাপে ক্লিষ্ট মানুষও সহজে ঐশ্বরিক আশীর্বাদের আশায় সেই ফাঁদে পা দেয়।