নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল হল ভারতের দক্ষিণ দিল্লি। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটাতে হল পুলিশকে। দক্ষিণ দিল্লির অভিজাত এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে দেয় দিল্লি ট্রাফিক পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের অবরোধে স্তব্ধ দিল্লি-মথুরা হাইওয়ে।
জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভে নেমেছিলেন এদিন। নিউ ফ্রেন্ডস কলোনিতে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্ররা। রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় পুলিশের এরপর উত্তেজনা আরও বাড়ে। বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের তাড়া খেয়ে ছাত্ররা ঢুকে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর। এর কিছুক্ষণ পর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টোদিকের রাস্তায় অবরোধ শুরু করে বিক্ষোভকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, শুরুতে ১০০-২০০ জনের মতো বিক্ষোভকারী থাকলেও যত সময় এগোয় তত সংখ্যা বাড়তে থাকে। দিল্লির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ থেকেও ছাত্ররা ওই জায়গায় পৌঁছে যায়। ঘপণ্টা খানেকের মধ্যে বড় জমায়েত করে ফেলে ছাত্ররা। স্বাভাবিক ভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই জায়গায় বড় বাহিনী মোতায়েন করে দিল্লি পুলিশ।
বিক্ষোভের জেরে ব্যাপক যানজট ছড়ায় দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। ওখলা থেকে সিতারা বিহার যাওয়ার আন্ডারপাশে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দিল্লি-মথুরা হাইওয়ে অবরোধের ফলে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় অন্য রাস্তায়। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবারের পর নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হল রাজধানীতে।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আন্দোলন চলছিল এদিন। কিন্তু পুলিশের প্ররোচনাতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিরান হায়দার ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, তাঁরা যাতে দ্রুত ক্যাম্পাসে বা হস্টেলে ফিরে আসেন।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধল হুগলির ডানকুনি ও উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসত চাঁপাডালি মোড়ে। দুটি জায়গাতেই বিক্ষোভকারীরা গুঁড়িয়ে দিল বিজেপির পার্টি অফিস। ডানকুনিতে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সভাতেও ব্যাপক গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটল। এক যুবককে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে চুরমার হয়ে গেল পুলিশের গাড়ি।
এদিন ডানকুনি রেল ওভার ব্রিজের নীচে বিজেপির অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ডানকুনি হাউসিং মোড়ে এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন বিরোধী একটি সভা ছিল। সভা শেষ হওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে। দুই বিজেপি কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা সেই সময়ে পার্টি অফিসে বসে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
ডানকুনিতে অন্য একটি সভা ডেকেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। অভিযোগ, ওই জমায়েতে এক যুবককে মারধর করা হয়। তাঁকে উদ্ধারে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িতেও। অনেকক্ষণ পরে ভিড়ের মধ্যে থেকে ওই যুবককে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
উত্তর চব্বিশ পরগনার সদর শহর বারাসতের প্রাণকেন্দ্র চাঁপাডালি মোড়ের অদূরে বিজেপি পার্টি অফিসেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে এদিন। অভিযোগ, ওই রাস্তা দিয়ে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মিছিল যাচ্ছিল। সেই মিছিল থেকেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।
ডানকুনি ও বারাসত- দু’টি জায়গাতেই তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় তৃনমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। শাসকদল যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।