বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
নাটোর: নাটোরে এক চিকিৎসক ও শিক্ষিকার অবাধ যৌনাচারের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে ঐ কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও শহরের সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের অবাধ যৌনাচারে সহযোগীতা না করায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন সেবিকাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে নাটোর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওই সেবিকা। তাদের বিচার দাবী করে অভিযোগ করেছেন কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের নিকট
এ ছাড়া কলেজ শিক্ষিকার অবাধ যৌনাচারের বিচার দাবী করে কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজ গভঃনিং বডির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেছে ওই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাটোর শহরের পশ্চিম আলাইপুর হাফরাস্তা এলাকায় বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপন ও নাটোর সিটি কলেজের এক প্রভাষকের ৪০মিনিট ও ২৮ মিনিটের অবাধ যৌনাচারের দুটি ভিডিও নাটোর শহরের সচেতন প্রায় সকল মানুষের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে।
এদিকে, স্কুল শিক্ষিকার আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একজন চিকিৎসক ও শিক্ষিকার এ ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে নিন্দার ঝড় বইছে।
অপরদিকে, অনৈতিক কাজে লিপ্ত শিক্ষিকাকে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বরখাস্ত অথবা বহিষ্কার না করায় কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসকের কাছে এক নারী লিখিত অভিযোগ করে বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমিনুল ইসলাম লিপন ও ওই প্রভাষক নাটোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত অবাধ যৌনাচারে মিলিত হন। তিনি এই হাসপাতালে গত ছয় বছর থেকে সহকারি সেবিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহযোগীতা না করায় প্রথমে তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করে ও জেল খাটানোর হুমকি দেয়। পরে চলতি বছরের ৫মার্চ পরিকল্পিত ভাবে তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠায়। যে মানুষ বিয়ে বহিভূত অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত এবং সেটা ভাইরাল হয়ে শহরের সব মানুষের কাছে থাকে তিনি কিভাবে তার দায়িত্বে বহাল থাকেন। তিনি তাদের বিচার দাবী করেছেন।
অপরদিকে, নাটোর সিটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে কলেজের সমাজ কল্যাণ বিষয়ের প্রভাষকের উপযুক্ত বিচার দাবী করে আবেদন করেছে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।
নাটোর সিটি কলেজের দুজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কোন শিক্ষক এমনটা করতে পারে তা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি না। কোথাও মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের এমন একজন সহকর্মী আছে এটা ভাবতেই আমরা লজ্জা পাচ্ছি। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সিটি কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাঃ লিপন এবং আমার মধ্যে চিকিৎসক রোগীর সম্পর্ক। আমি চিকিৎসার জন্য নিয়মিত তার চেম্বারে যাতায়াত করতাম। এ ভিডিও কীভাবে ফাঁস হলো তিনি জানেন না। আমি অভিযোগকারী নারীকে চিনি না ও জানি না। তৃতীয় একটি পক্ষ আমার সুনামক্ষুন্ন করার জন্য এসব অভিযোগ করছে। এই ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অপরদিকে নাটোরে বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং এসএমএস দেওয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার চেম্বারে গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি।
ডাঃ আমিনুল ইসলাম লিপনের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ক্লিনিক মালিক জানান, ওই শিক্ষিকা ফেসবুক এবং ফোনে ডাঃ লিপনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে। এক পর্যায়ে সে নিজেই ঘনিষ্ঠ মূহর্তের ভিডিও ধারণ করে এবং স্থানীয় কিছু তরুণকে দিয়ে ভিডিওটি পাঠিয়ে চিকিৎসককে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। মোটা অংকের টাকা না দিলে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে মান ইজ্জতের কথা ভেবে চিকিৎসক টাকা দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে। কিন্তু ততক্ষণে ভিডিওটি হাতে হাতে ছড়িয়ে পরে।
ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাটোর শহরের কোন এক ক্লিনিেকে ডাক্তার আমিনুল ইসলাম লিপন এবং শিক্ষিকা অনৈতিক কাজ করেন। এসময় সাথী তার মোবাইল ফোন দিয়ে নিজেই গোপনে পুরো ভিডিওটি ধারণ করেন।
সূত্র বলছে, শিক্ষিকার সাথে ডাক্তার আমিনুল ইসলাম লিপনের মনোমালিন্য হয়। পরবর্তীতে সাথী নিজেই ভিডিওটি রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে পাঠায়। পরবর্তীতে ঢাকায় জেলা যুবলীগ এবং সাবেক ছাত্রলীগের এক নেতার হস্তক্ষেপে অন্তত ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়। আর শিক্ষিকা পান মোট ২০ লাখ টাকা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই রফাদফা বৈঠকে থাকা সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান বিষয়টি খুবই বিব্রতকর আখ্যায়িত করে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ পাওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে মিটিং ডেকে শিক্ষিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অপর দিকে কলেজের গভঃর্নিং বডির সভাপতি ও নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার বলেছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। তাদের অপকর্মের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি সমাজের জন্য চরম লজ্জাজনক বিষয়। শিক্ষকতা আদর্শের পেশা। শিক্ষার্থী ও সমাজের মানুষ তাদের অনুসরণ করেন। একজন শিক্ষিকার এমন ভিডিও সমাজের অবক্ষয় ছাড়া কিছুই না। এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।