Home পরিবেশ বিরল প্রজাতির সেই নীলগাইটি এখন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে

বিরল প্রজাতির সেই নীলগাইটি এখন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে

ঠাকুরগাঁওয়ে উদ্ধার করা নীলগাই। এটা এখন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

গাজীপুর: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার সীমান্ত এলাকা পাড়িয়া ইউনিয়নের ফকিরভিটা গ্রাম থেকে গত সোমবার উদ্ধার নীলগাইটি এখন শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের নতুন অতিথি।  বিরল হরিণ প্রজাতির এন্টিলোপ গোত্রের নীলগাইটিকে সাফারি পার্কের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এটাকে এখানে আনা হয়েছে বৃহস্পতিবার ভোরে।

জানা গেছে, দলছুট হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি নীলগাই সীমান্ত পার হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গিতে ঢুকে পরে। ফকিরভিটা নামক এলাকায় প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা করে এলাকাবাসিকে সাথে নিয়ে বিজিবি নীলগাইটিকে ধরতে সক্ষম হয়। উদ্ধারের পর দিনাজপুরের জাতীয় উদ্যান রামসাগর চিড়িয়াখানাতে রাখা হয়। পরে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে নীলগাইটি সাফারি পার্কে আনা হয়।

পার্ক সূত্র জানায়, পার্কের ভেতরের কোর সাফারির একটি বেষ্টনীতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে নীলগাইটিকে। সেখানে দুই সপ্তাহ রাখার পর আফ্রিকান সাফারির নীলগাই বেষ্টনিতে অবমুক্ত করা হবে। পার্কে আগে থেকেই ৮টি নীলগাই আছে। নতুন নীলগাইটি আনার পর মোট ৯টি হলো এই পরিবারে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (ঢাকা) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, আমাদের সাফারি পার্কে নীলগাই বেশ কয়েকবার বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। পার্কে দুবার জমজ বাচ্চার জন্ম হয়েছে নীলগাই পরিবারের। এ বছর ওয়াইল্ডবিস্ট, জেব্রা, কমইল্যান্ডও বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। এখন নতুন একটি নীলগাইসহ পার্কে মোট নয়টি নীলগাই। তার মধ্যে সাতটি পুরুষ ও দুটি নারী রয়েছে এ পালে।

নীলগাই বাংলাদেশ থেকে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একসময় উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকায় নীলগাইয়ের বিচরণ ছিল। শেষবার ১৯৪০ সালে একটি নীলগাই দেখা গিয়েছিল পঞ্চগড়ে। এরপর দীর্ঘ ৮১ বছরে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে আর কোথাও প্রাণীটিকে দেখা যায়নি। ভারতে প্রায় এক লাখ নীলগাই রয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতিতেও নীলগাইয়ের দেখা মেলে।

২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মামুদপুর-ঠুঠাপাড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা একটি নীলগাই জবাইয়ের প্রস্তুতি নেয়। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ  (বিজিবি) সদস্যরা এটিকে উদ্ধার করে রাজশাহীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেন। এই স্ত্রী নীলগাইটিকে পরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় একটি পুরুষ নীলগাই। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা এটিকেও ধরে জবাইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়।

পুরুষ নীলগাইয়ের রং গাঢ় ধূসর। অনেকটা কালচে রঙের। পুরুষ নীলগাইয়ের উচ্চতা ৫২ থেকে ৫৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এদের শিং-এর দৈর্ঘ্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। মাদি নীলগাইয়ের রং লালচে বাদামি। হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরুর দিকে এরা মিলিত হয়। এদের গর্ভধারণকাল ২৪৩ দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জোড়া বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে এরা। জন্মের ৪০ মিনিট পরেই দাঁড়াতে পারে বাচ্চা। মর্দা নীলগাই তিন বছর আর মাদি নীলগাই দুই বছরের মধ্যেই প্রজননে সক্ষম হয়। নীলগাইয়ের গড় আয়ু সাধারণত ২১ বছর।