বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: পদ্মা ব্যাংক কোনোভাবে লোকসান থেকে বের হতে পারছে না। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ব্যাংকটির। নানা সমস্যায় প্রতিবছর লোকসানের অংক কেবল স্ফীত হচ্ছে। ২০২০ সালে লোকসান হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা।
২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকার সম্পদের বিপরীতে পদ্মা ব্যাংককে সুদ দিতে হচ্ছে। আর তাদের আয় হচ্ছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার সম্পদ থেকে। ফলে ২০২০ সালে ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে জুন পর্যন্ত সময়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ছয় মাসে ১২০ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে পদ্মা ব্যাংকের। এরমধ্যে ৭১ কোটি টাকা নিট সুদের মার্জিন। আর এভাবে লাকসান করতে থাকায় ব্যাংকের মূলধন কমে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকটি বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুরুতেই এই ব্যাংকটি কাস্টডিতে নিয়ে বন্ধ করে দেয়া দরকার ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। করেক বছর ধারাবাহিক লোকসান দিল। এই লোকসানের টাকা কোথা থেকে আসবে? এখন আবার ব্যাংকটি সমস্যায় পড়েছে। এবার যদি কোনভাবে সহযোগিতা করা হয়, আবার তারা লোকসান করবে। এর চেয়ে ব্যাংকটি বন্ধ করে দেয়া হোক।’
এর আগে অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। সে সময় চাপের মুখে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরের বছর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, যিনি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট পিএলসি এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান।
সে সময় পদ্মা ব্যাংককে উদ্ধার করতে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক, যা ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশ। কিন্তু টাকার অভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খাওয়া এ ব্যাংক এখন আবার সরকারের কাছে নতুন আবেদন করেছে। টিকে থাকার জন্য পদ্মা ব্যাংক এখন সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতে চাইছে। আর তা না হলে সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গণমাধম্যকে বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংককে সরকারি ব্যাংকের সাথে মার্জার বা অ্যাকুইজেশনের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। পরের প্রস্তাবটি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সেটি সময় সাপেক্ষ।’
গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়, পুনর্গঠন করা হয় পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকের নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক। সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে পদ্মা ব্যাংকের মালিকানার বেশিরভাগ অংশ কিনে নেয়। সেজন্য ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন যোগাতে হয়।