Home Second Lead ফুটবল সম্রাট পেলে না ফেরার দেশে

ফুটবল সম্রাট পেলে না ফেরার দেশে

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

শেষ হলো একটা অধ্যায়। ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পাও পাওলোর একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসকরা বলেই দিয়েছিলেন তাঁর ক্যান্সার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছে। শেষ দিকে কোনও চিকিৎসাই কাজ দিচ্ছিল না।এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ফুটবলের সম্রাট।

পেলে সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। টানা ২৯ দিন পর লড়াই থামল ‘কালো মাণিক’-এর। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পেলে থামলেন জীবনের মাঠে। রেখে গেলেন বহু কীর্তিমালা, যা আগামী ফুটবল ইতিহাসকেও সমান আলোকিত ও উজ্জ্বল করে রাখবে।

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন পেলে। তার পুরো নাম, এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্তো। তিনিই বিশ্ব ফুটবলকে মাতিয়ে রেখেছিলেন। নিজের দক্ষতায় ব্রাজিলকে জিতেছিলেন তিন তিনটি বিশ্বকাপ। বিশ্বের আর কোন ফুটবলারের এই রেকর্ড নেই। কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসাবে দেশকে জিতিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ। পর পর চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন।

তার পায়ের স্কিলের ঝলকানিতে রঙিন ও বর্ণময় হয়ে উঠেছিল বিশ্ব ফুটবল। তাকেই আইডল হিসাবে সামনে রেখে বিশ্ব ফুটবল এগিয়েছে এক অনন্য গতিতে। অথচ আজ তিনি আর নেই। বিশ্ব ফুটবল কে অভিভাবকহীন করে চলে গেলেন ফুটবলকে নিঃস্ব করে।

পেলের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ অসুস্থতার পর প্রয়াত হয়েছেন পেলে। বিশ্ব ফুটবলের সম্ভবত প্রথম সুপারস্টার পেলে। তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দিয়েগো মারাদোনা ২০২০ সালে ৬০ বছর বয়সে মারা যান আচমকাই। একটা সময় এই দুজনকে নিয়েই তুলনা উঠতো কে সেরা? যদিও ফিফা ম্যাগাজিনের পাঠক এবং জুরি বোর্ডের বিচারে পেলেই বিংশ শতাব্দীর ‘শ্রেষ্ঠ’ ফুটবলারের তকমা জেতেন। আজও তার সেই সেরার তকমা অক্ষুন্ন থেকে গেলেও, পেলে আজ নেই।

পেলের মতো কিংবদন্তিদের কোনও মৃত্যু হয় না। তাঁরা আজীবন বেঁচে থাকেন ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে।ব্রাজিলের ত্রেস কোরাক্লায়েস শহরের এক বস্তিতে জন্মেছিলেন তিনি। খেলার জন্য ছিল না কোনও বল। কখনএ খড়ের বল বানিয়ে আবার কখনও মোজাকে বল বানিয়ে ফুটবল খেলতেন। দারিদ্র্য ছিল জীবনে, কিন্তু দেহে-মনে ছিল ফুটবল এবং ঐশ্বরিক শক্তি।

তিনি ফুটবলের স্রষ্টা, ফুটবলের রাজা, ফুটবলের সবচেয়ে বড় সন্তান,যাঁর পোষাকি নাম ছিল অ্যারেন্তেস ডু ন্যাসিমেন্টো এডসন।

জন্মের পর থেকেই ফুটবলের সঙ্গে সখ্য তাঁর। ব্রাজিলের ট্রেস কোরাক্লাসের রাস্তায় ফুটবল খেলে কেটেছে পেলের ফুটবলের ছেলেবেলা। ব্রাজিলের এক খ্যাতিমান ফুটবল তারকা বিট্রো পেলেকে আবিষ্কার করেন।

বিট্রোর সহায়তায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে ব্রাজিলের প্রথম সারির দল স্যান্টোসে খেলার সুযোগ পান। তাঁকে দেওয়া হয় ১০ নম্বর জার্সি। তিনি সে জার্সির মর্যাদা সম্মানের সঙ্গে রেখেছেন সবসময়। অভিষেক ম্যাচে গোল করেন পেলে। তাঁর দল জেতে ৭-১ গোলে। তিনি একটানা ১৮ বছর স্যান্টোসের হয়ে খেলেছেন।

পেলের বাবা-মা তাঁর নাম রাখেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের সঙ্গে মিল রেখে। পর্তুগিজ উচ্চারণে এডিসনকে তাঁরা বলতেন এডসন। বস্তির বন্ধুরা পেলেকে চিনতো ‘ডিকো’ নামে।

দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে পরিবারের অভাব অনটন মেটানোর জন্য ছেলেবেলাতেই পেলেকে চায়ের দোকানে কাজ করতে হয়েছিল। এছাড়া রেলস্টেশন ঝাড়ু দেওয়ার পাশাপাশি কিছুদিন জুতো পরিষ্কারের কাজও করেছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল পেলের। একদিন সেই স্বপ্ন সত্যি হল। ফুটবল খেলে বিশ্বজয় করলেন ছেলেটি। কিন্তু তাঁর পেছনে রয়েছে আরও অনেক ইতিহাস।

তাঁকে বলা হয় সর্বকালের সেরা ফুটবলার। এক কথায় বলা যায়, পেলে ছাড়া ফুটবল কিছুই না।

১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপে পেলের অভিষেক হয়। বয়স তখন ১৭ বছর ৮ মাস। সে বছর গোটেনবার্গে ১৫ জুন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে নামেন পেলে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের বিরুদ্ধে ৭৩ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় পেলের দেওয়া গোলে ব্রাজিল জেতে ১-০-তে। সেমিফাইনালে ফ্রান্স হারে ৫-২ গোলে। ওই ম্যাচে পেলে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। সেই দল ছিল সোনার, গ্যারিঞ্চা, দিদা, পেলে, মাজুলো, জাগালো, সবাই মহাতারকা।

যদিও পেলে ছিলেন একটি নাম, বিপননের নামও। পেলের খেলা দেখতে মাঠ ভরে যেত। তিনি ছিলেন ফুটবলের প্রকৃত অর্থের প্রথম সন্তানও।