Home চা শিল্প বাংলাদেশে চা রপ্তানি করতে চায় আসাম

বাংলাদেশে চা রপ্তানি করতে চায় আসাম

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

চা রপ্তানি বৃদ্ধি করতে এবার বড় উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে আসাম সরকার।

ভারতে উৎপাদিত মোট চায়ের অর্ধেকই উৎপাদন হয় আসাম রাজ্যে। তাই চা রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে রাজ্যটি। এবার রপ্তানি আরও গতিশীল করতে স্থলবন্দরের চেয়ে আকাশপথকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত রাজ্য আসামে ছোট-বড় মিলিয়ে ছয়টি বিমানবন্দর রয়েছে। ভারতের একক কোন রাজ্যের বিমানবন্দরের সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ। আসাম সরকার বিবিএম (বাংলাদেশ, ভুটান ও মায়ানমার) ও আসিয়ান দেশের বাজারগুলোতে বাগান থেকে চা সরাসরি দেশগুলোতে রপ্তানি করতে চায়। এই বিমানবন্দরগুলোর মাধ্যমে রাজ্যটি আন্তঃসীমান্ত বাজারগুলোর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের বরাতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের বলা হয়, সনোয়াল বলেন, বিবিএম ও আসিয়ান মিলে ৮০ কোটি মানুষের বাজার। আমাদের আসাম থেকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। এ বাজারগুলো দখল করতে উপযুক্ত অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এটি শাকসবজির মতো দ্রুত নষ্ট হওয়া কৃষিপণ্য রপ্তানি উপযোগী করে তুলবে।

চা রপ্তানি বাড়াতে সরকার আসামের বাগানগুলোর মধ্যে মূল্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে সরসরি রপ্তানি উপযোগী এবং ই-মার্কেট বিস্তৃত করতে কাজ করছে। লক্ষ্মী টি সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুদ্র চ্যাটার্জি বলেন, বাগানগুলো থেকে বাল্ক চা বিক্রি না করে চা বাগানের মধ্যে এটি প্রক্রিয়াজাত ও প্যাক করা যায়। এছাড়া ই-প্লাটফর্মের মাধ্যমে এগুলো সরাসরি বাজারজাত করা যায়। এটি একদিকে মধ্যস্থতাকারীর প্রচুর খরচ বাঁচাতে পারে এবং অন্যদিকে বাগান মালিকদের ভালো দাম পেতে সহায়তা করতে পারে। আসামে মূল্য শৃঙ্খল আনার জন্য আমরা সরকারের কাছ থেকে ১০ শতাংশ ভর্তুকি চেয়েছি। তিনি বলেন, মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও আসাম সরকারের নির্দেশে মহামারী চালাকালীন উদ্যানগুলো উদ্বোধনের পরে লক্ষ্মী টি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সংস্থাটি প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ কেজি চা রপ্তানি করছে। প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেজিংয়ের ব্যয় বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি কাঁচা চা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ রুপি নিয়ে আসছে।

গ্রিন, ওলং, মাসালা, হোয়াইট, রোজ ও অন্যান্য চা প্রক্রিয়াকরণ ও প্যাকেজিং হচ্ছে আসামের মোড়ল, নারায়ণপুর, আদাবাড়ি, কেন্দুগিরির চা বাগান ও দার্জিলিংয়ের মোকাবাড়ি টি এস্টেটে। এ ব্যবস্থা অন্য জায়গায়ও শুরু করা যেতে পারে। সনোয়াল আরও বলেন, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার ও ইমামির মতো ব্র্যান্ডগুলো আসামে ইউনিট স্থাপন করেছে এবং সেখানে থেকেই তারা রপ্তানির সুযোগ খুঁজছে। বহ্মপুত্রের তীরে হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করে একটি লজিস্টিক হাব তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে থাকা বন্দরগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে।

জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ইমামির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুশীল আগরওয়াল বলেন, বিবিএম ও আসিয়ান দেশগুলোর বাজারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হলে শিল্প বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। আর তখন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সহায়তাগুলো বড় শিল্পের জন্য প্রসারিত করা প্রয়োজন। গত বছর ভারতে ৪ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ১৩৮ কোটি ৯৭ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। এরমধ্যে আসামে উৎপাদন হয়েছিল ৭১ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা। তবে চলতি বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জারি করা লকডাউনের ধাক্কা লেগেছে আসামের চা উৎপাদনে। শুরুর দিকে রাজ্যটিতে উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে এ বছর আসামের চা উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যেতে পারে।

আসামের চা শিল্পের বয়স প্রায় ১৮০ বছর। রাজ্যটিতে ৮০৩টি রেজিস্টার্ড চা বাগান ও আরও ১০ হাজারের মতো ছোট চা বাগান রয়েছে। দুটো বিশ্বযুদ্ধ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, অর্থনৈতিক মন্দা, ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা পার করে এসেছে এ শিল্প। তবে করোনাকালের মতো আগে কখনই এতো বড় উৎপাদন হ্রাস ও লোকসানের মুখে পড়তে হয়নি আসামের চা শিল্পসংশ্লিষ্টদের। সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।