সালেহ নোমান
বিদ্যমান আবহওয়া পূর্বাভাস আরো নির্ভূল করতে বাংলাদেশ আবহাওয়া দপ্তর যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ান আধুনিক আবহাওয়া স্যাটেলাইট ’জিকে কম্পস্যাট টুএ( GEO KOMPSAT 2A)’ সাথে ।
আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন স্যাটেলাইটের তথ্য উপাত্ত দিয়ে উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ভিত্তিকও ঝড় বৃষ্টি ও তাপমাত্রা, বঙ্গোপসাগরের ঝড়, জলোচ্ছাস থেকে শুরু করে রোদের তেজষ্ক্রিয়তা বিষয়ে আরো সূস্পষ্ট তথ্য উপাত্ত পাওয়া সম্ভব। চলতি বছরের জুন থেকে কোরিয়ান স্যাটেলাইটের তথ্য উপাত্ত নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বর্তমানে দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য জাপানের আবহাওয়া স্যাটেলাইট হিমাওয়ারী ও চীনের ফেংইয়াং-২ এর তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করছে দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত সংকেত ও ছবি বিশেষ সফটওয়্যারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে তথ্য- উপাত্ত পাওয়া যায় তা এখন আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরিতে প্রধান্য দেয়া হয়। এছাড়াও দেশের ৪৩ টি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন এডব্লিএস- এর তথ্যও ব্যবহার করা হয় পূর্বাভাস তৈরিতে।
আবহওয়া ও জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের সাথে সমন্বয় রেখে পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ’জিও কম্প স্যাটেলাইট টুএ’র সাথে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কয়েক দফা সফর ও তথ্য বিনিময়ের পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই নিয়ে কোরিয়া-বাংলাদেশ মধ্যে সমঝোতা স্মারক সাক্ষর হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহওয়া অধিপ্তরের আবহওয়াবিদ ডক্টর আবদুল মান্নান।
তিনি জানান, ”বাংলাদেশ এখন যে সব স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত, দক্ষিন কোরিয়ার এই স্যাটেলাইটটি সেগুলোর চেয়েও আধুনিক এবং অনেক বেশি তথ্য উপাত্ত সরবরাহে সক্ষম। জাপানের হিমাওয়ারী স্যাটেলাইটের অবস্থান ১৪০ ডিগ্রী পূর্বে আর কোরিয়ার স্যাটেলাইটটির অবস্থান বাংলাদেশের আরো কাছে, ১২৮ ডিগ্রি পূর্বে।
তুলনমুলক কম দূরত্বে অবস্থান করায় ‘জিও কম্পস্যাট টুএ’ থেকে অধিক পরিমান তথ্য উপাত্ত নির্ভূল ভাবে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। এখানে সমুদ্রজনিত এবং আবহাওয়াজনিত দূর্যোগের প্রবণতা বেশি।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সামুদ্রিক ঝড়- জলোচ্ছাস, কালবৈশাখি ও মৌসুমী ঝড়, অতিবৃষ্টি, খড়া, তাপপ্রবাহ, শৈত্য প্রবাহ, ভুমিধ্বস ও ভূমিকম্প। দেশের ৬৮ শতাংশ এলাকা বন্যাপ্রবন এবং ২০-২২ শতাংশ এলাকা সাধারন বন্যায় নিমজ্জিত হয়।
জিও কম্পস্যাট ২এ স্যাটেলাইটটি কোরিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়া আবহওয়া সংস্থা ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই উৎক্ষেপন করেছে। এর সাহায্যে এই স্যাটেলাইটি একই সাথে যোগাযোগ, সামুদ্রিক এবং আবহওয়ার তথ্য সংগ্রহে সক্ষম। এটি ৫০টির অধিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে করছে।
তবে, এরমধ্যে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য ২০-১৫টি বিষয়ের তথ্য নেয়া হবে। এসব তথ্য উপাত্তের সাহায়্যে বঙ্গোপসাগরের আবহওয়া সম্পর্কে ধারণা আরো স্পষ্টভাবে পাওয়া যাবে। একই সাথে মেঘমালার বিভিন্ন স্তরের তাপমাত্রা এবং সূর্যের আলোর তেজষ্য়িতার মাত্রা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন আবহওয়াবিদ আবুল কালাম আজাদ মল্লিক।
তিনি বলেন, ”কেরিয়ান স্যাটেলাইটের তথ্য নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, সেই সাথে আবহওয়া দপ্তরের জনবলকেও এই প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষন দেয়ার প্রয়োজন হবে।”
আগামী জুন নাগাদ কোরিয়ান স্যাটেলাইটের তথ্য সংগ্রহ শুরু হবে। এই স্যাটেলাইট থেকে প্রয়োজনীয় সবগুলো তথ্য গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে এক থেকে দুই বছর পযন্ত লেগে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
নতুন করে কোরিয়ান স্যাটেলাইটের সাথে যুক্ত হলেও আবহওয়ার তথ্য উপাত্তের জন্য পূর্বের স্যাটেলাইট ও অন্য উৎসগুলোর সংযুক্তিও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক এন্ড এ্যাটোমোস্ফিয়ার এডমিনিস্ট্রেশন NOAA এবং ভারতীয় স্যাটেলাইট INSAT এর তথ্য সংগ্রহ করতো। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট থেকে এখন দিনে দুইবার আবহওয়ার তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেলেও ভারতীয় স্যাটেলাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ আপাতত বন্ধ আছে।
জাপান এবং চীনের স্যাটেলাইট থেকে দিনে ২৪ঘন্টা সার্বক্ষনিক তথ্য ও ছবি পাওয়া যাচ্ছে। শীঘ্রই যুক্ত হতে যাওয়া দক্ষিন কোরিয়ার স্যাটেলাইট থেকে সার্বক্ষনিক তথ্য ও ছবি পাওয়া যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের তথ্যচিত্র ছাড়াও রাডার ব্যবহার করে আবহাওয়ার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। তবে, বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকার তথ্য সংগ্রহ করার তেমন ব্যবস্থা নেই। জাপান এবং চীনের স্যাটেলাইট থেকে বঙ্গোপসাগরের যে তথ্য পাওয়া যায় তা খুবই সামান্য। যার কারণে সমুদ্রের তথ্য জানার জন্য পুরোপুরি অন্য দেশের আবহওয়া দপ্তরের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এখন কেরিয়ান স্যাটেলাইট থেকে সমুদ্রের তথ্য সরাসরি সংগ্রহ করা যাবে।