নিজামুল হক বিপুল
বিশ্ব বাঘ দিবস আজ (২৯ জুলাই)। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বাঘ আমার অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার।’
২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে বিশ্ব বাঘ দিবসের সূচনা হয়। সারা বিশ্বে দিবসটি পালন করা হলেও বাঘ টিকে আছে মাত্র ১৩টি দেশে। সেখানে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশে পরবর্তী ১২ বছরে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গত ১২ বছরে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ শতাংশের কিছু বেশি। ২০১০ সালে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন হাজার, বর্তমানে বাঘের সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের মতো।
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। বাঘ সুন্দরবনের ফ্ল্যাগশিপ স্পিসিজ হিসেবে কাজ করছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, খাদ্যশৃঙ্খল ও প্রতিবেশচক্রের প্রধান নিয়ন্ত্রকও বাঘ। বনভূমি উজাড়, অবৈধ চোরা শিকারসহ আরও নানা কারণে বাংলাদেশের জাতীয় পশু ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটিকে প্রতিনিধিত্ব করা বাঘ এখন মহা-বিপন্নের তালিকায় রয়েছে।
বাঘ সংরক্ষণে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন বছর মেয়াদী “সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প” নামে প্রকল্প গ্রহণ করেছে ২০১৮ সালে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং এর মাধ্যমে বাঘ গণনা, বাঘের শিকার প্রাণি যেমন- হরিণ ও শূকরের সংখ্যা গণনা, সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের ফেন্সিং বা বেষ্টনী তৈরিসহ বাঘ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মূলত সুন্দরবনের বাঘ বাঁচাতে এবং মানুষের সঙ্গে বাঘের দ্বন্দ্ব এড়াতে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের জয়মনির ঘোল থেকে দাসের ভাড়ানি পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এবং পশ্চিম বন বিভাগের আওতায় কইখালী থেকে কদমতলা পর্যন্ত বাকি ২০ কিলোমিটার নাইলনের নেট বসানোর কথা। এটা হলে সুন্দরবনের যত্রতত্র মানুষের প্রবেশ বন্ধ হবে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনায় সুন্দরবন অংশে নাইলনের নেট বসানো হয়েছে অনেক আগে। এতে করে বাঘ যেমন লোকালয়ে যাচ্ছে না। তেমনি মানুষ যত্রতত্র সুন্দরবনে ঢুকছে না।
এই প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাছের মোহসীন হোসেন বৃহস্পতিবার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর আমরা বাঘ গণনা করি।
এ বছর বাঘ গণনার বছর উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঘ গণনাসহ সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্ধ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। বরাদ্ধ পেলে এ বছরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বৃহস্পতিবার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। শুধু বাঘ সংরক্ষণ নয়, সুন্দরবন কেন্দ্রিক আরও অনেকগুলো কাজ হবে এই প্রকল্পের অধীন।
এদিকে বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে পরিচালিত বাঘ জরিপে ১০৬টি এবং ২০১৭-১৮ সালে পরিচালিত জরিপে ১১৪টি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ শতাংশ। অন্যান্য বন্যপ্রাণিদের অবাধ বিচরণ ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বন বিভাগ।
এ ছাড়া বাঘ সংরক্ষণের জন্য ১০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উভয় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ, বাঘ ও শিকারি প্রাণি পাচার বন্ধ, দক্ষতা বৃদ্ধি, মনিটরিং ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি প্রটোকল স্বাক্ষর হয়।
প্রাণি সংরক্ষণ ও গবেষণায় নিয়োজিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘দ্বিগুণ না হলেও গত ১২ বছরে বাঘ বৃদ্ধি পাওয়া একটি ইতিবাচক দিক। এখানে বাংলাদেশেরও কিছু অবদান রয়েছে। ২০১৫ সালে দেশে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি, যা বেড়ে বর্তমানে ১১৪টি হয়েছে, সেটিও ইতিবাচক। গত ১২ বছরে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানত চোরা শিকার বন্ধ করতে পারলে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব। সুন্দরবনের স্থলভাগ যদি পানিতে চলে না যায় বা ভূমি সংকুচিত না হয় তাহলে সুন্দরবনে ২০০ বাঘ থাকা সম্ভব। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামেও দ্বিতীয় হ্যাবিট্যাট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।’
এদিকে বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে আজ (শুক্রবার) রাজধানীর বন অধিদপ্তরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিবেন।