Home Second Lead বাবার কোলে শিশুকে গুলি করে হত্যা

বাবার কোলে শিশুকে গুলি করে হত্যা

জান্নাত

বেগমগঞ্জ ( নোয়াখালী) থেকে সংবাদদাতা: বেগমগঞ্জে বাবার কোলে থাকা এক শিশুকে গুলি করে হত্যা করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শিশুটির বাবাও। নিহত শিশুর নাম জান্নাতুল ফিরদৌস (৩)।

বুধবার বিকেল পৌণে ৪টার দিকে উপজেলার ১৪ নং হাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মলকার বাপের দোকান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জান্নাতুল সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরের (৩৭) মেয়ে। অভিযুক্ত রিমন (২৫) একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।

১৪ নং হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আজিম বলেন, রিমন এলাকার চিহিৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

নিহতের মামাতো ভাই আবদুল্যাহ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়ির আল আমিন নামে এক ব্যক্তি জমির মাটি বিক্রি করে সন্ত্রাসী রিমনের কাকা বাদশার কাছে। বাদশা ওই জায়গা থেকে ছয় ফুট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। কারণ এভাবে মাটি কাটতে গেলে তাদের জায়গা ভেঙ্গে পড়বে। একপর্যায়ে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে সন্ত্রাসী রিমন ও তার সহযোগী রহিম, মহিন, সুজনসহ আরও কয়েকজন গত দুই দিন একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে। আমার গর্ভবতী ভাগ্নির পেটে লাথি দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশকে জানালে তাকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে বলে।

তিনি আরও বলেন, মাটি কাটার বিরোধের জের ধরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন, সুজনসহ ১০-১৫ জন অস্ত্রধারী মালকার বাপের দোকান এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা জাহের তার শিশু মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসে চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন আমার মামাকে আমার দোকানে দেখে মামাকে গালমন্দ করে বলে তোর শেল্টারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোঁড়ে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে। এরপর মামা দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে এবং মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে জান্নাত কানে, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামার চোখে গুলিবিদ্ধ হয়।  এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জান্নাত মারা যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজিব বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে গুলিতে নিহত শিশু জান্নাতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে চৌমুহনী- ফেনী সড়কের সোরেগো পুল এলাকা অবরোধ করে। এসময় তারা শিশু জান্নাত (৪) হত্যা ও সন্ত্রাসী হামলার বিচার দাবি করে। প্রায় এক ঘণ্টার সড়ক অবরোধে চৌমুহনী-ফেনী সড়কে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়।

এ সময় বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দোষীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে স্বজন ও এলাকাবাসী অবরোধ তুলে নেয়।

মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, সেহরির সময় নিহতের লাশ ঢাকা থেকে নোয়াখালী পৌঁছায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’