বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
গাজিপুর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তার নির্মাণাধীন বাড়ির কনট্রাকটর ও রাজমিস্ত্রি আনারুল ইসলাম (২৫) তাকে হত্যা করেছে টাকা ছিনিয়ে নিতে বাধা এবং ডাক-চিৎকার করায়।
আনারুল হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা জানিয়েছে। তাকে আটক করার পর তার দেওয়া তথ্যে শুক্রবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের ভেতরে একটি ঝোপ থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় অধ্যাপক সাইদার লাশ উদ্ধার করা হয়।
মামলার বাদী নিহতের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির এজাহারে উল্লেখ করেন, তার মা কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পাইনিশাইল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে তার মালিকানাধীন প্লটে বাড়ি নির্মাণকাজ করার জন্য ওই আবাসিক প্রকল্প সংলগ্ন দক্ষিণ পানিশাইল মোশারফ মৃধার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকতেন। সেখান থেকে আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে বাড়ির নির্মাণকাজ দেখাশোনা করতেন।
এতে বলা হয়, ‘গত ১১ জানুয়ারি আনুমানিক রাত ৮টার দিকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমার ছোট বোন হেমেল মাকে তার মোবাইলের মেসেঞ্জারে ম্যাসেজ পাঠান। মা ওই ম্যাসেজ সিন না করায় পরদিন সকাল ৮টার দিকে মায়ের মোবাইলে ফোন দিলেও মা ফোন রিসিভ করেননি।’
এজাহারে বলা হয়, ‘পরে বাড়ির নির্মাণকাজের কনট্রাকটর আনারুল ইসলাম ফোন দিয়ে আমার মামা তৈয়ব ও শেখ শমসের গাফফারকে জানায় আজকে ম্যাডাম (আমার মা) আসেনি এবং ফোন বন্ধ। তখন মামা কনট্রাকটর আনারুলকে বাসায় গিয়ে টাকা আনতে বলে।’
‘পরে নির্মাণকাজের লেবার নজরুল আমার মায়ের বাসায় গিয়ে দেখে যে, গেইট খোলা, আলমারিতে চাবি ঝুলছে এবং অন্য আলমারি খোলা এবং মাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ’ উল্লেখ করা হয় এজাহারে।
এতে বলা হয়, ‘ওই সংবাদের ভিত্তিতে গত ১২ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে আমার মায়ের ভাড়া করা বাসায় এসে মাকে না দেখতে পেয়ে এবং সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আমার বোন সাদিয়া আফরিন কাশিমপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।’
নিহতের ছেলে আরও জানান, কাশিমপুর থানার পুলিশ জিডির তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গাইবান্ধা সাদুল্যাপুর থানার বুজুর্গ এলাকার আনসার আলীর ছেলে মো. আনারুল ইসলাম আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
বাদীর ধারণা, আসামি আনারুল অজ্ঞাত সহযোগীদের সহায়তায় তার মাকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে রাখে।
ভাড়া বাসা থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার দূরে তার লাশটি পাওয়া যায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন কাশিমপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ মিজানুর রহমান জানান, সাধারণ ডায়েরি করার পর নির্মাণাধীন বাড়ির প্লটে গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। পরে ওই প্লটে কর্মরত রাজমিস্ত্রি আনারুলকে গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনারুল হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, প্রফেসর সাইদা গাফফারের হাতে টাকা দেখে সে ছিনিয়ে নিতে চায়। এ সময় প্রফেসর সাইদা গাফ্ফার ডাক-চিৎকার দিলে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় আনারুল।’
নিহত সাইদা গাফফারের স্বামী মৃত জহিরুল হক। তার ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির ঢাকার উত্তরার পশ্চিম থানার ১২নং রোডের ১৭নং বাড়িতে বসবাস করেন। নিহতের তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এবং একজন দেশে থাকেন।